📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া… আহা একটু ভুল হল… এখানে পাড়া ঘুমিয়ে থাকে, পাড়া কেন, গোটা গ্রামই ঘুমিয়ে থাকে, কিন্তু দুয়ার এঁটে নয়, বরং দুয়ার খুলেই। সারা দিন-সারা রাত। বন্ধ করবেই বা কীভাবে? কোনও বাড়িতেই যে দরজা নেই। না এটাও ভুল বললাম, দরজার ফ্রেম আছে, কিন্তু পাল্লা নেই। গোটা গ্রামের একটা বাড়িতেও নেই। এমন কী ব্যাঙ্কেও তালা পড়ে না!
আমাদের দেশেই আছে সে গ্রাম। মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে শনি শিঙ্গনাপুর গ্রাম। শিংনাপুরেই কোনও বাড়িতে কোনও দরজায় পাল্লা নেই। খিল তোলারও বালাই নেই। দরজা খুলেই গ্রামবাসী বেরিয়ে পড়েন নিশ্চিন্তে। চুরি, ডাকাতি, লুট-পাটের কোনও ভয় নেই। কারণ গত তিনশ বছরই শনি শিংনাপুর জুড়ে কোথাও কোনও অপরাধ ঘটেনি।
গ্রামের নামের সঙ্গে জড়িয়ে তিনশ বছরের প্রচলিত গল্প। একবার একটা কালো পাথর পাওয়া গিয়েছিল পানাশনালা নদির পাড়ে। স্থানীয় কেউ সেই পাথরে একটা লাঠি দিয়ে আঘাত করতেই নাকি বেরিয়ে এসেছিল লাল তরল। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, পাথর থেকে রক্ত ঝরেছিল। সেই রাতেই নাকি গ্রামবাসীরা স্বপ্নে শনি দেবতার দেখা পান। অমনি ভক্তিভরে দেবতার কাছে জানতে চাওয়া হয়, গ্রামে তাঁর কোনও মন্দির গড়ে দিলে, তিনি খুশি হবেন? তার উত্তরে শনি দেবতা নাকি জানিয়ে দেন, তিনি নিজেই, আকাশ ছাড়া আর কোনও ছাদে বিশ্বাস করেন না, তাই মন্দির নয়, মানুষের হৃদয়জুড়ে থাকতে চান তিনি। স্বপ্নেই নাকি শনি এও বলে যান, গোটা গ্রামে যেন আর কোনও দরজা না থাকে।
দরজা না থাকলে নিরাপত্তা থাকবে? শনির নাকি বিশ্বাস ছিল, থাকবে। খোলা দরজা দিয়ে যদি অপরাধী ঘরে ঢোকে? শনি স্বপ্নে বলে গিয়েছিলেন, তেমনটা হলে সে ব্যক্তির মনের অসুখ ধরবে। কপাল মন্দ হবে টানা সাত বছর, অন্ধও হয়ে যেতে পারেন। সে দিনের পর থেকে আনুমানিক ৩ শতক পেরিয়েছে। একটি দিনের জন্যেও গ্রামের কোনও ঘরের দরজা বন্ধ হয়নি। স্থানীয়রা বলেন, কোনও এক কালে কেউ নাকি নিজের বাড়িতে একটা দরজা বানিয়েছিলেন, কিন্তু সে রাতেই তাঁর বাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটে। তাই দ্বিতীয়বার এই কাজটি কেউ করেননি।
সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার, বাড়ি ঘরে না হয় দরজা নেই, তা বলে থানা, ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, কোত্থাও দরজা নেই? তালা পড়ে না? এটাই সত্যি। ব্যাঙ্কেও তালা নেই। ভারতের একমাত্র দরজাহীন ব্যাঙ্ক, এই গ্রামেই। দরজা যে একেবারে নেই, তা বলা ভুল, অটোমেটিক একটি দরজা বসানো হয়েছিল শুরুতে, কিন্তু তা প্রায় কখনওই বন্ধ হতেও দেখেনি কেউ।
রবি ঠাকুর, সেই কবে বলেছিলেন, ‘মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ’। শনি শিংনাপুরবাসীও মানুষের ওপর বিশ্বাস হারাননি, বিশ্বাস হারাননা গত তিন শতাব্দী ধরেও। এমন অবিশ্বাসের যুগে এও এক নজির বটে!