📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: কালো ধোঁয়া উড়িয়ে, জোরালো শব্দ করে, গাঁকগাঁক করে ছুটে চলা গতির যুগে বড্ড বেমানান সে। তার শ্লথ গতি, বড়সড় চেহারা, নিজের পথে নিজের মতো দূষণহীন চলা– এসবই যেন বড় বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠেছে। তাই শেষমেশ বিদায় নেবে সে। হারিয়ে যাবে শহর থেকে। কারণ, আজ তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। বোঝা হয়ে উঠেছে সে।
তাই কলকাতায় আর থাকবে না ট্রাম। দেড় শতক ধরে শহরের নস্টালজিয়া বহন করে, বহু মানুষের যাত্রাপথের বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে থেকে, শহরের অন্যতম এক বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠে, দেশ-বিদেশের প্রশংসা কুড়িয়ে বিদায় নেবে সে। সম্প্রতি, ট্রাম নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে সরকারের ট্রাম-নীতি জানতে চেয়েছিল আদালত। নবান্ন সূত্রের খবর, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার পরে, শেষমেশ শহর থেকে ট্রাম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতর হলফনামা দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ট্রাম নিয়ে তাদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানাতে চলেছে।
কলকাতায় সম্প্রতি প্রায়ই অভিযোগ ওঠে, ট্রামলাইনের জন্য দুর্ঘটনা ঘটার। তার উপর ট্রামের গুরুত্বও বর্তমানে প্রায় নেই। বরং যানজট বাড়ায় তার শ্লথ গতি ও বড় চেহারা। তার উপর জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তা অনেক কম। ফলে এমনিতেই যান নিয়ন্ত্রণ একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তার মধ্যে রাস্তার উপর ট্রামলাইন যেন আরও সমস্যা বাড়ায়। তাই সব মিলিয়ে, ট্রাম যেন আজ শহরের বোঝা হয়ে উঠেছে এত বছর ধরে বিশ্বস্ত পরিষেবা দিয়ে আসার পরেও। ফলে জানা গেছে, সমস্ত ট্রাম রুট বন্ধ করে দেওয়া হবে। অচল রুটগুলির ট্রামলাইনও তুলে ফেলা হবে।
ট্রাম কলকাতার ঐতিহ্য শুধু নয়, নস্টালজিয়াও। ট্রামের টিংটিং ঘণ্টিতে, কাঠের সিটে, শেষ আসনে বসে খাওয়া বাদামভাজার খোলসে যে কত সুখদুঃখ-হাসিকান্না জমে আছে, তার ইয়ত্তা নেই। ভারতের আর কোনও শহরে ট্রাম চলে না। আর সেই ট্রামই এখন ফেয়ারওয়েলের অপেক্ষায়। দেড়শো বছর ধরে শহরের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে থেকে গেলেও ‘হেরিটেজ’ তকমা জোটেনি তার। তথ্য বলছে, একসময় কলকাতায় গমগম করে ট্রাম চলত ২৭-২৮টি রুটে। বছর ১৫ আগেও এক ডজন রুটে সচল ছিল ট্রাম। তবে ২০১৮ সালে মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর ট্রামের গুরুত্ব আরও কমে যায়। কারণ ওই ঘটনার পরে সরকার শহরের ব্রিজগুলির উপরে থাকা সমস্ত ট্রামলাইন তুলে দেয়। ফলে ট্রামের চলাচল আরও সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়।
কলকাতায় এই মুহূর্তে মাত্র তিনটি রুটে ট্রাম পরিষেবা চালু রয়েছে। টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট-ধর্মতলা এবং ধর্মতলা-শ্যামবাজার। এবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই তিন রুট থেকেও ট্রাম বিদায় নেবে। তাহলে কি ট্রামের ঐতিহ্যই একেবারে মুছে যাবে শহর থেকে? আগামী প্রজন্ম কি আর চোখেও দেখতে পাবে না এই যান? তা যাতে না হয়, সে জন্য ধর্মতলা থেকে ময়দান পর্যন্ত লুপ লাইনে ট্রামের জয় রাইডের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানা গেছে। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা উপভোগ করতে পারবেন ট্রামযাত্রা।