পর পর ৫০০ ভূমিকম্প, ধ্বংসের কিনারায় দাঁড়িয়ে গ্রিস!

📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: ছবির মতো সাজানো দেশ। সেই গ্রিসই এবার মহাসঙ্কটে। একটি, দু’টি বা কয়েকটি নয়, পর পর ৫০০ বার ভূমিকম্প। দফায় দফায় কেঁপে উঠল একাধিক দ্বীপ। স্যান্টোরিনি থেকে আমোরগসের মাঝে এজিয়ান সাগরের দক্ষিণে, জলের নীচ থেকে ছড়ায় কম্পন। আর তাতেই জরুরি সতর্কতা জারি হয়েছে দেশ জুড়ে। রবিবার থেকে বার বার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে গ্রিস। ২০০-র বেশি কম্পন অনুভূত হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে নাগরিকদের মধ্যে। পর্যটক অধ্যুষিত স্যান্টোরিনিতে জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধারকার্য শুরু হয়েছে। খালি করে দেওয়া হচ্ছে বাড়িঘর, হোটেল। তীব্র শক্তিশালী ভূমিকম্প আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা।বিশেষ করে স্যান্টোরিনির পরিস্থিতি ঘিরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। সেখানে Kolumbo আগ্নেয়গিরিও রয়েছে। স্যান্টোরিনি ভূমিকম্পপ্রবণ বলেও পরিচিত। তবে আগ্নেয়গিরি না কি জলের নীচে টেকটোনিক পাতের আনাগোনা ভূমিকম্পের জন্য দায়ী, তা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। মঙ্গলবার সকালও ৪.৯ তীব্রতায় কম্পন অনুভূত হয়। সামনে আরও বড় বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিতসোতাকিস নাগরিকদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করেছেন। সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে অনুরোধ করেছেন সকলকে। দেশের সরকারের সঙ্গে বিজ্ঞানীদের জরুরি বৈঠক রয়েছে। সেখানে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে। প্রতিবছর স্যান্টোরিনিতে লক্ষ লক্ষ পর্যটক ভিড় করেন, যার উপর গ্রিসের অর্থনীতিও অনেকাংশে নির্ভর করে। স্যান্টোরিনির জনসংখ্যা মোটে ১৫০০০। কিন্তু ২০২৩ সালে সেখানে ৩০ লক্ষের বেশি পর্যটক হাজির হন। গত বছর ৩৫ লক্ষের বেশি। তাই বুঝেশুনে পা ফেলতে চাইছে গ্রিস সরকার।

আপাতত জরুরি পরিস্থিতিতে উদ্ধারকারী দল নামানো হয়েছে স্যান্টোরিনিতে। স্কুল-কলেজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। পর পর ৫০০-র বেশি ভূমিকম্পের নজির সচরাচর দেখা যায় না। এটিকে বিরল ভূতাত্ত্বিক ঘটনা হিসেবেই দেখছেন বিজ্ঞানীরা। এজিয়ান সাগর সংলগ্ন দ্বীপগুলিতে আপাতত পর্যটকদের ঘোরাফেরার উপর সতর্কতা জারি করা হয়েছে।পর পর ভূমিকম্পের পর মোবাইল ফোনেও সতর্কবার্তা ঢুকেছে। পাথর গড়িয়ে পড়া থেকে বেশি তীব্রতার ভূমিকম্পের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে সরকার। ওল্ট পোর্টের মতো কিছু জায়গা, যেখানে খাড়া পাহাড় রয়েছে, ইতিমধ্যেই সেখানে অবাধ ঘোরাফেরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতি ১০-২০ মিনিট অন্তর কম্পন অনুভূত হচ্ছে। অনেকে ইতিমধ্যেই বাড়ি ছেড়েছেন।

গ্রিস এমনিতে ভূমিকম্প প্রবণ দেশ হিসেবেই পরিচিত। সেখানে মাটির নীচে একাধিক চ্যুতিরেখা রয়েছে। বিশেষ করে অর্ধচন্দ্রাকৃতির স্যান্টোরিনি সংলগ্ন সাগরের নীচের অংশ ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল বলে চিহ্নিত হয়েছে। সেখানে একটি ছোট আকারের টেকটোনিক পাত রয়েছে, যা আফ্রিকান পাত পর্যন্ত বিস্তৃত। আফ্রিকান পাতটি আবার ইউরেশিয়ান পাতের নীচে ঢুকে গিয়েছে। সেই পাতটি নড়াচড়া করলেই কেঁপে ওঠে গ্রিস।

১৯৫৬ সালে ৭.৭ তীব্রতায় ভূমিকম্প হয় সেখানে। সুনামি আছড়ে পড়ে দ্বীপে, যাতে ৫৬ জন প্রাণ হারান। ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রচুর। ২০১১ এবং ২০১২ সালেও পর পর ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে গ্রিস। কিন্তু সেই সংখ্যা ১০০ ছাড়ায়নি।

আজ থেকে ৩৫০০ বছর আগে বিধ্বংসী অগ্ন্যুৎপাতে সাক্ষী হয় গ্রিস। খ্রিস্টপূর্ব ১৬২০ সালে। এতে স্যান্টোরিনির সিংহভাগ অংশ ধসে যায়। ওই অগ্ন্যুৎপাতের জেরেই মিনোয়ান সভ্যতার বিলুপ্তি ঘটে বলে মনে করেন ইতিহাসবিদ থেকে বিজ্ঞানীরা। পাঁচের দশকেই শেষবার অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল যদিও। কিন্তু যেভাবে মুহুর্মুহু ভূমিকম্প আছড়ে পড়ছে, তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সকলে। (Minoan Civilisation)

error: Content is protected !!