গঙ্গাসাগরে জনপ্লাবন, নিরাপত্তার ঘেরা টোপে চলছে পুণ্যস্নান

📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: ১ থেকে ৬ নম্বর স্নানঘাট জুড়ে লক্ষ পুণ্যার্থীর স্রোত আছড়ে পড়ল সাগরের জলে। মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নানে আরও একবার ফুটে উঠল বিশ্বাস, পরম্পরা এবং ভক্তির অপূর্ব মেলবন্ধন।গত দু’দিনের তুলনায় ঠান্ডার দাপট কমলেও উত্তুরে হাওয়া চলছে। তার মধ্যেই মোক্ষ লাভের আশায় পুণ্যের ডুব দিতে হাজার, হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে পুণ্যার্থীরা এসেছেন বঙ্গোপসাগরের সঙ্গমে। সাধু–সন্ত থেকে গৃহী, সকলেই ডুব দিচ্ছেন পুণ্যলাভের আশায়। তেমনই এক মুখ কেশব কত্যায়ন। ঝাড়খণ্ডের টাটানগর থেকে স্ত্রী এবং দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে তিনি এসেছেন এখানে। ঠান্ডা উপেক্ষা করে দুই শিশুকে নিয়ে ডুব দিয়েছেন দম্পতি। কেশব কত্যায়ন বলছিলেন, ‘আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বয়স আড়াই বছর, ছেলের এক বছর। শুনেছি সাগরে স্নান করে কপিল মুনির মন্দিরের পুজো দিলে মনস্কামনা পূর্ণ হয়। সেই বিশ্বাসে আস্থা রেখে গঙ্গাসাগরে এসেছি। ছেলে–মেয়ে যেন ভালো মানুষ হয়।’অভিনব মিলনমেলায় প্রাপ্তির তৃপ্তি যেমন রয়েছে, তেমনই আছে প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলার উৎকণ্ঠা। পুণ্যস্নানের পরে অনেকে হারিয়েছেন প্রিয়জনকে। কারও খোয়া গিয়েছে জিনিসপত্র। মেলার পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে সর্বক্ষণ চলছে বিভিন্ন রাজ্যের ভাষায় নিখোঁজের ঘোষণা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত নিখোঁজের সংখ্যা ৪৬৮৩। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় ৪৬৬০ জন ফিরে পেয়েছেন পরিবারের সদস্যদের।

বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘বিকেল তিনটে পর্যন্ত ৮৫ লক্ষ পুণ্যার্থী মেলায় এসেছেন। মহাকুম্ভ থাকলেও এ বার জনজোয়ার ও জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে সাগরমেলা। দেশের নানা প্রান্তের সঙ্গে বিদেশ থেকেও বহু পুণ্যার্থী এসেছেন।’ সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন মন্ত্রী পুলক রায়, সুজিত বোস, বঙ্কিম হাজরা, মানস ভুঁইয়া, রথীন ঘোষ, স্নেহাশিস চক্রবর্তী। এ দিন বিকেল পর্যন্ত পাঁচ পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ সাতজনকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ৬৭২ জন বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে গ্রেপ্তার হয়েছে। সরকারি পরিষেবার পাশাপাশি ১৪২টি এনজিও-‌র দশ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেছেন।বুধবারও কয়েক লক্ষ পুণ্যার্থী মেলায় আসবেন। পুণ্যযোগ চলবে সকাল ৬টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত। বাবুঘাট, কাকদ্বীপ ও নামখানা পয়েন্টে অপেক্ষায় আছেন পুণ্যার্থীরা। এ দিন স্নান শেষে কপিলমুনির আশ্রমে পুজো দেওয়ার দীর্ঘ লাইন ছিল। ড্রপগেটে কিছুক্ষণ আটকে থাকার পর আশ্রমে পুজো দেওয়ার সুযোগ পান দর্শনার্থীরা। বিকেলে মুড়িগঙ্গা নদীর ভাটার জন্য ঘন্টা দেড়েক ভেসেল ও কচুবেড়িয়া বাস সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ক্লান্তি বা বিরক্তির লেশমাত্র নেই কারও চোখমুখে। ১ নম্বর স্নানঘাটে দেখা হল উত্তরপ্রদেশের বেরিলি থেকে আসা ৫০ জনের একটি দলের সঙ্গে। প্রত্যেকেই কৃষির সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা বলছিলেন, ‘কিছু ছন্দপতন হবেই, তবে সেটা সাময়িক। চোখের সামনে মিনি ভারতবর্ষকে দেখাও এক ধরনের পুণ্যলাভ।’

error: Content is protected !!