মুনমুনের বিয়ের দিন ভরতের পাশে বসে কলা পাতায় বাঙালি আহার করলেন সঞ্জীব কুমার

📝শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় , Todays Story: বম্বের যে তিন নায়কের সঙ্গে সুচিত্রার ভাল সম্পর্ক ছিল, তাঁরা হলেন দেব আনন্দ, ধর্মেন্দ্র ও সঞ্জীব কুমার। তবে কাজের বাইরে দেব সাব ও ধরমজির সঙ্গে সুচিত্রার সম্পর্ক বেশি গড়ায়নি। কিন্তু সঞ্জীব কুমার ছিলেন সুচিত্রার সত্যিকারের বন্ধু। দু’জনে একটি মাত্র ছবিতে অভিনয় করলেও সুচিত্রা যে ভরসা, বিশ্বাস উত্তমকুমারকে করেননি তা সঞ্জীব কুমারকে করেছিলেন। সঞ্জীব কুমার তথাকথিত অ্যাকশন হিরো বা বেবিফেস রোম্যান্টিক হিরো ছিলেন না। তিনি পর্দায় আসা মানেই ভাবগম্ভীর চরিত্র। যদিও একটা চাপা সেক্স অ্যাপিল তাঁর ছিল। ভারী চেহারার জন্য মজা করে সঞ্জীবকে ‘মোটু’ বলে ডাকতেন সুচিত্রা সেন। সঞ্জীব কুমার কিন্তু সুচিত্রা সেনের থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট ছিলেন। তবু দু’জনের বন্ধুত্ব ছিল তুখোড়। পর্দাতেও তাঁদের জুটি হিট। ‘আঁধি’র পরেও সঞ্জীব কুমারকে নিয়ে বাংলা ছবি করতে চেয়েছিলেন সুচিত্রা। কিন্তু সঞ্জীব কুমারের অকালমৃত্যু সে আর হতে দিল না। সুচিত্রাও চলে গেলেন চির অন্তরালে।

মুনমুন সেন তখনও ছবির জগতে আসেননি। মায়ের বন্ধু সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে মুনমুনের খুব মধুর সম্পর্ক ছিল। মুনমুনের বিয়ে ঠিক হল ত্রিপুরার রাজ পরিবারে, দেববর্মণ পরিবারে। জামাই ভরত দেববর্মণ। ভরত কিন্তু ছিলেন মুনমুনের নিজের পছন্দ। মুনমুন পরে মা সুচিত্রার অনুমতি পান। ভরত দেববর্মণের নিজের মাসি আবার জয়পুর রাজমাতা গায়ত্রী দেবী। গায়ত্রী দেবী মুনমুনকে আশীর্বাদ করতে এসেছিলেন সুচিত্রার বাড়ি। দুই বিশ্বসুন্দরী সুচিত্রা সেন আর গায়ত্রী দেবী মুখোমুখি বসে ভরত আর মুনমুনের বিয়ের পাকা কথা বলেছিলেন। পরে বিয়েতেও এসেছিলেন গায়ত্রী দেবী।

মুনমুনের বিয়ের অনেক আগেই মারা যান তাঁর বাবা দিবানাথ সেন। সেই জায়গা সেই পিতার দায় দায়িত্ব পূরণ করেছিলেন সঞ্জীব কুমার। সুচিত্রা মেয়ের বিয়েতে সঞ্জীবকে বিশেষ ভাবে নিমন্ত্রণ করেন। দু’জনের বন্ধুত্ব এতটাই ছিল যে এই বিয়েতে কন্যাপক্ষের হয়ে, বলতে গেলে বাবার মতোই, সব দায়িত্ব পালন করেন সঞ্জীব কুমার। জামাই ভরত বর্মণের হাতে কন্যাসমা মুনমুনকে তুলে দেন সঞ্জীব কুমার নিজেই। মুনমুনকে বিয়েতে সম্প্রদান করেছিলেন সঞ্জীব কুমার। জামাই ভরতকে পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে খাইয়েছিলেন সুচিত্রা। আর ভরতের পাশে বসে যত্ন করে তাঁকে খাইয়েছিলেন সঞ্জীব কুমার। তখন বাঙালি বিয়েতে খাওয়ানো হত কলা পাতায়। সঞ্জীব কুমার কলা পাতায় বাঙালি পদ আর মাটির গ্লাসে জল খেয়েছিলেন।

প্রফেশানাল জগতের বাইরে দুই নায়ক-নায়িকার এত পারিবারিক হৃদ্যতা খুবই বিরল। তবে ভরত আর সঞ্জীব ছিলেন প্রায় বন্ধুর মতো। সঞ্জীবকে নাম ধরেই ডাকতেন ভরত। তাই চিরকাল ভরত ও মুনমুনের কাছে হরি ভাই সঞ্জীব কুমারের জন্য আলাদা একটা শ্রদ্ধার সম্পর্ক তোলা ছিল।

বিয়ের দিন ভরতকে রাজপুত্তুরের মতোই লাগছিল। রজনীগন্ধার মালায় যেন দেবদূত। আজও সাজলেন ভরত রজনীগন্ধার মালায়। আজও তাঁর দিকে হাজার ক্যামেরা। সেদিন ভরত মুনমুনকে পাশে বসিয়ে নিয়ে গেছিলেন তাঁর সংসারে। আজ মুনমুন গাড়ির সামনে বসে ফুলের সাজে ভরতকে দিয়ে এলেন অমৃতলোকে।

‘ফুল সাজতে লাগে
পুজোয় লাগে
লাগে মালা গেঁথে নিতে
লাগে জন্মদিনে, ফুলশয্যায়
লাগে মৃতদেহ সাজিয়ে দিতে…

হায়, কত রসিক দেখো ভগবান!’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This will close in 0 seconds