📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: ৫ অক্টোবর । ধর্মতলা মেট্রো চ্যানেল । আমরণে অনশনে বসলেন ৬ জন জুনিয়র ডাক্তার । দিনটা ছিল দুর্গাপুজোর তৃতীয়া । একদিকে যখন কলকাতার অধিকাংশ মানুষ উৎসবের প্রস্তুতিতে মেতে, সেইসময় আন্দোলনকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেলেন জুনিয়র ডাক্তাররা । সেই থেকে শুরু । টানা ১৩ দিন আমরণ অনশন চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের । অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে । আর যাঁরা রয়েছেন অনশন মঞ্চে…দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছেন, শারীরিক সমস্যা বাড়ছে, কিন্তু মন শক্ত । লক্ষে অবিচল । কিন্তু, প্রায় দুই সপ্তাহের অনশনে কেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের কথা ভাবছেন না, কেন তাঁদের কাছে এলেন না ? কোথায় গেল তাঁর মাতৃসত্তা, এবার সেই প্রশ্ন তুললেন অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা । এদিকে, নতুন কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা । ‘ন্যায়বিচার যাত্রার’ ডাক দিয়েছেন ।
৫ অক্টোবর থেকে যে ছয় জুনিয়র ডাক্তার অনশন করছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা,স্নিগ্ধা হাজরারা । সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁরা প্রশ্ন তুললেন, মুখ্যমন্ত্রী কেন এত নিষ্ঠুর ? জুনিয়র ডাক্তারদের কথায়, মানুষ তাঁদের সঙ্গে রয়েছে । তাঁদের আন্দোলনে সাড়া দিচ্ছে । কিন্তু, যাঁর পাশে থাকার কথা, তিনি কেন নেই ? সায়ন্তনীর কথায়,”মুখ্যমন্ত্রীর কি একবারের জন্যেও মনে হচ্ছে না যে, ওদের শুকনো মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখি? এই নিষ্ঠুরতা আমাদের নির্বাক করে দিচ্ছে।” মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, “আর কত দিন আমরা না খেয়ে থাকব, আপনি বলে দিন। প্রত্যেক ফোঁটা চোখের জলের হিসাব দিতে হবে।”
রুমেলিকার কথায়, সরকারের ভুলের মাসুল দিতে হচ্ছে তাঁদের । এভাবে তাঁদের এখানে না খেয়ে বসে থাকার কথা ছিল না । এর জন্য দায়ী একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী । রুমেলিকা বলেন, “আমাদের যে সহযোদ্ধারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, তাঁরা আপনাদের দুর্নীতি এবং ধাপ্পাবাজির মাসুল দিচ্ছেন।”
বাংলার মানুষের উদ্দেশে জুনিয়র ডাক্তারদের অনুরোধ, “আমাদের পাশে দাঁড়ান। আমাদের মনোবল দিন। আমাদের শরীর ক্রমশ ভেঙে যাচ্ছে। কণ্ঠও ক্ষীণ হচ্ছে। আপনাদের কণ্ঠে আমরা শক্তি পাব।”
উল্লেখ্য, আগেও দেবাশিস সাংবাদিক বৈঠক করে প্রশ্ন তুলেছিলেন,”মুখ্যমন্ত্রী কেন চুপ ? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এতটা অমানবিক হতে পারেন, সরকার এতটা অমানবিক হতে পারে,এত দিন হয়ে গেল, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে কোনও কথা শুনতে পাচ্ছি না। আমরা শুনতে পাচ্ছি মুখ্যসচিবের থেকে একটা মেল, কোনও একটা কুণাল ঘোষ, কোনও ছুটকো-ছাটকার বিরূপ প্রতিক্রিয়া।”
ন্যায়বিচার যাত্রা
শনিবার দুপুর ২টোয় নির্যাতিতার বাড়ি থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত কর্মসূচি রয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের । কর্মসূচির নাম ‘ন্যায়বিচার যাত্রা’ । তবে, রিলে পদ্ধতিতে হবে এই কর্মসূচি । কারণ এতটা পথ হাঁটা সম্ভব নয় । এই কর্মসূচিতে নির্যাতিতার বাব-মা যোগ দেবেন কি না, তা এখনও জানা যায়নি ।
গত ৫ অক্টোবর থেকে আমরণ অনশনে বসেন তনয়া পাঁজা, স্নিগ্ধা হাজরা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায় এবং পুলস্ত্য আচার্য। পরের দিন অনশনে যোগ দেন অনিকেত । সাতজনের মধ্যে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন অর্ণব, সায়ন্তনী, স্নিগ্ধা । বাকিরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন । অনিকেত অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরিচয় পাণ্ডা বং আলোলিকা ঘড়ুই অনশনে যোগ দেন । ১৪ অক্টোবর থেকে অনশন শুরু করেন সন্দীপ মণ্ডল । ১৫ অক্টোবর থেকে অনশনে যোগ দেন রুমেলিকা কুমার, স্পন্দন চৌধুরীরা ।