ঘর মুছছিলেন গৌরী দেবী, তারপর.. উত্তম কুমারের বাড়ির ‘গৌরীরূপী’ লক্ষ্মীর ইতিহাস জানেন?

📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: আজ কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। ঘরে ঘরে আরাধনা চলছে কমলা দেবীর। সকাল থেকেই বাজারে ভিড়। চলছে জোর প্রস্তুতি। তবে টলিউডের এই তারকাদের পুজোয় সবসময়ই নজর থাকে নেটিজেনদের। মহা ধুমধামে ধনদেবীর আরাধনা করা হয় উত্তর কুমারের পরিবারে।

ঘটা করে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো হয় মহানায়ক উত্তমকুমারের ভবানীপুরের বাড়িতে। প্রতিবছরই শ্বশুরবাড়ির লক্ষ্মীপুজোর দায়িত্ব থাকে দেবলীনা কুমারের উপর। ভবানীপুরে উত্তমকুমারের বাড়ির বৈশিষ্ট্য হল লক্ষ্মী ঠাকুরের মুখের আদল গৃহলক্ষ্মী গৌরী দেবীর মতো। আজও বাড়িতেই তৈরি হয় প্রতিমা।

লক্ষ্মী পুজোর আগে তাই বেজায় ব্যস্ত থাকেন গৌরব ঘরণী। ‘গৌরীরূপী’ লক্ষ্মীকে ঘরে তোলা থেকে , সাজানো গোছানো সমস্ত দায়িত্ব থাকে গৌরব দেবলীনার উপরেই। এখনও উত্তম কুমার, তরুণ কুমারের আসনে বসেই পুজো করেন গৌরব চট্টোপাধ্যায়। এবারের পুজোতেও তাঁদের মাথায় গুরুভার।

অভিনেত্রীর কথায়, “প্রতিবারের মতো এবারেও আয়োজনের কলেবর একইরকম। বিশাল আয়োজন না থাকলেও অতিথি আপ্যায়ণে কোনওরকম খামতি থাকে না। প্রত্যেকেই মাকে ভালোবেসে দর্শন করতে আসেন। প্রতিবারের মতো এবারেও সব রীতি মেনেই পুজো হবে। যথাসম্ভব চেষ্টা করব মনপ্রাণ দিয়ে পুজো করার। আলাদা কিছুই নয়।”

কেন গৌরী দেবীর মতো মুখের আদল?

উত্তম কুমারের বাড়ির লক্ষ্মী ঠাকুরের মুখের আদল নিয়ে একটি গল্প প্ৰচলিত রয়েছে। ‘যদুবংশ’ ছবির শুটিংয়ে মূর্তি গড়ছিলেন নিরঞ্জন পাল। আর সেই দৃশ্য দেখে নিজের বাড়ির প্রতিমার বায়নাও তাঁকেই দেবেন বলে শিল্পীকে বাড়িতে ডেকেছিলেন উত্তম কুমার। শিল্পীকে বসিয়ে ,গৌরী দেবী নাকি সেই সময় ঘর মুছছিলেন। তিনি ঘোমটার ফাঁক থেকে এক ঝলক তাকিয়ে শিল্পীকে বসতে বলার পর উত্তমকুমারকে ডেকে দেন। সেই এক ঝলকেই লক্ষ্মীর মুখ কল্পনা করে নেন ওই শিল্পী। তিনি ছাঁচ ভেঙে গৌরীদেবীর মুখের আদলে লক্ষ্মীমূর্তি গড়েন। সেই থেকেই ওই মূর্তিতেই পুজো হয়ে আসছে মহানায়কের পরিবারে।

১৯৫০ সালে ছেলে গৌতমের জন্মের বছরেই মহানায়ক উত্তমকুমারের ইচ্ছেয় ভবানীপুরে গিরিশ মুখার্জি রোডের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো শুরু হয়। সেই সময় ছবি বিশ্বাসের বাড়ির পুজোর নাকি টলিপাড়ায় বেজায় জনপ্রিয়তা ছিল। সেই থেকেই নাকি মহানায়কের সাধ হয় তিনিও পুজো করবেন। সেই সময় নাকি টলিপাড়া থেকে আর্ট ডিরেক্টররা এসে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির উঠোন জুড়ে আল্পনা আঁকতেন। আজও সেই ধারা প্রচলিত।

সেই আমল থেকেই একটা রুপোর ঘট বসানো হয় দেবী লক্ষ্মীর সামনে। স্ত্রী গৌরীদেবী নিজের গয়নায় সাজাতেন মাকে। এ বাড়িতে পুজোর ভোগ তৈরির অধিকার শুধুমাত্র দীক্ষিত পরিবারের মেয়ে বা পুত্রবধূদেরই। ভোগে থাকে পোলাও, লুচি, ছোলার ডাল, পাঁচরকম ভাজা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পায়েস। আজও এই পুজোর ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দেবলীনা গৌরবরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *