বাদামতলার থিম ‘উৎসবের চালচিত্র’, হিন্দুস্থান পার্কে ‘কল্পঋতুর গল্প গাথা’, তৃতীয়ার সন্ধ্যায় উপচে পড়া ভিড় মণ্ডপে মণ্ডপে

📝শুভদীপ রায় চৌধুরী , Todays Story: আজ চতুর্থী, মহালয়ার দিন থেকেই শহরের রাজপথে নেমেছেন পুজোপ্রেমীরা। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো থেকে শুরু করে উত্তর-দক্ষিণ মিলিয়ে একাধিক নামী পুজোয় ভিড় করেছেন আমজনতা। থিকথিক করা মানুষের ভিড়ের চেনা ছবি ধরা পড়ছে সর্বত্র। মোট কথা পুজোর আনন্দ চেটেপুটে উপভোগ করতে তৈরি আট থেকে আশি সকলেই।
দক্ষিণ কলকাতার নামী পুজোগুলির অন্যতম বাদামতলা আষাঢ় সংঘ। ৮৬ তম বর্ষে শিল্পী প্রদীপ্ত কর্মকারের শিল্প ভাবনায় ফুটে উঠেছে বাদামতলার মণ্ডপ। ‘উৎসবের চালচিত্র’ এই থিমের বিষয়ে কথা হল শিল্পীর সঙ্গে। তিনি জানান, শারদোৎসব বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের পাশাপাশি বর্তমানে এই উৎসব এককথায় পুরদস্তুর এক ইন্ডাস্ট্রি। এর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক লেনদেনের সম্পর্ক। ডেকরেটর্স, ঢাকি থেকে শুরু করে বিক্রেতা সকলেই উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। কারণ দুর্গাপুজোই তাঁদের কাছে অর্থনৈতিক সঞ্চয়ের সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি। সম্প্রতি আরজি কর সহ কলকাতার একাধিক অঞ্চলে নৃশংসতার চেনা ছবি বারবার ধরা পড়ছে। এই নিয়ে শিল্পীর বক্তব্য, ‘আমরাও চাই সঠিক বিচার, তবে বিচারের পাশাপাশি যেহেতু বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো তাই পুজোর দিনগুলিতে মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়ে প্রতিমা দর্শন করার চিরকালীন প্রথাকেও তাঁরা ভুলতে পারেন না। তাই সবটাই প্রয়োজন, কোনটাকেই বাদ দিয়ে চলা সম্ভব নয়।’
বাদামতলার পাশাপাশি, বালিগঞ্জ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন থেকে শুরু করে ত্রিধারা, সমাজসেবী সমস্ত মণ্ডপেই তৃতীয়ার ভিড় দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক মহাষ্টমীর রাতে কি পরিমাণ জনজোয়ার দেখতে চলেছে তিলোত্তমা। দক্ষিণ কলকাতার হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীনের এবছরের থিম ‘ কল্পঋতুর গল্প গাথা’। শিল্পী মলয়-শুভময়ের ভাবনায় ফুটে উঠেছে এবারের পুজো মণ্ডপ। এ বিষয়ে কথা হল হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীনের সাংগঠনিক সম্পাদক ডঃ অরিজিৎ রায় চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে মানুষের মনের নানান যুদ্ধ থেকে শুরু দেশ-বিদেশ জুড়ে যুদ্ধের বাতাবরণ দেখে কিংবা পড়ে সাধারণ মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু হঠাৎ যদি এমন ঋতু উপস্থিত হত যে সেই ঋতুতে কোনরকমের যুদ্ধ করা যাবে না, থাকবে না কোন হানাহানি তাহলে মানুষ হয়তো প্রাণ খুলে বাঁচতে পারত। অরিজিৎ বাবু এও বলেন, ঠিক মহাভারতের সময় যেমন নিয়ম ছিল সূর্যাস্তের পর যুদ্ধ করা যাবে না ঠিক তেমন ভাবেই যদি কোন ঋতু উপস্থিত হত যেখানে মানুষে মানুষে মেলবন্ধন তৈরি হবে, উৎসবে ফিরতে পারবেন সেই কল্পনায় তৈরি হয়েছে এবারের পুজো মণ্ডপ। প্রায় ২মাস ধরে তৈরি হওয়া মণ্ডপে তৃতীয়ার সন্ধ্যায় উপচে পড়া ভিড় নজরে কেড়েছে সকলের। মহানগরীর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অরিজিৎ বাবুর আর্জি, কোন আইন প্রণয়ন করে এই নৃশংসতাকে বন্ধ করা সম্ভব নয়, যতক্ষণ না মানুষ নিজে থেকে মনকে পরিবর্তন করতে চাইছেন। এর পাশাপাশি, তিনিও আশাবাদী যে কেন্দ্রীয় দুই গোয়েন্দা বিভাগ নিশ্চয় সঠিক বিচার সাধারণ মানুষকে পাইয়ে দেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *