📝শুভদীপ রায় চৌধুরী, Todays Story: বাঙালির কাছে দুর্গাপুজো মানেই এক নস্টালজিয়া। আর মহালয়ার ভোর মানেই প্রত্যেকের কানে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই স্তোত্র এবং চোখে ভাসে দূরদর্শনের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। টেলিভিশনে দুর্গার চরিত্রে মানুষ সবার প্রথম যাঁকে দেখে অভ্যস্ত তিনি হলেন শিল্পী সংযুক্তাছর অতিক্রান্ত, তবু বাঙালি পুজো এলেই সংযুক্তার দুর্গা চরিত্রে অভিনয় বারবার মনে করেন, এটাই বোধ হয় শিল্পী জীবনের সার্থকতা।
প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে কানাডায় থাকেন অভিনেত্রী সংযুক্তা। বলাবাহুল্য, কানাডায় তাঁর নিজস্ব নাচের স্কুলও রয়েছে। পূজার চার দিন তাঁর নাচের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কানাডা কিংবা আমেরিকার অন্যান্য শহরে একাধিক শো করেই কাটান তিনি। ২০১৪ সালে শেষ দুর্গা রূপে দেখা গিয়েছে সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তবে আজও সমাজ মাধ্যমে ট্রেন্ডিং সংযুক্তার সেই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’৷
প্রতিবারই পুজো নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা আলাদা উন্মাদনা কাজ করলেও চলতি বছরের ছবিটা কিছুটা আলাদা। সম্প্রতি আরজি কর নিয়ে তোলপাড় বাংলা সহ গোটা দেশ। বিদেশের মাটিতেও তার আঁচ পড়েছে। আর সকলের প্রিয় দুর্গাও আজ সেই ধর্ষকরূপী অসুরের বিরুদ্ধে মুহুর্মুহু গর্জন করছেন। প্রশ্ন তুলে দিলেন, ‘যেখানে নারীশক্তির অপমান হয়, সমাজে দিনের পর দিন নারীরা লাঞ্ছিত হয় সেখানে সাধারণ মানুষ কিভাবে উৎসবে মেতে উঠবেন?’
উল্লেখ্য, মহালয়ার প্রাক্কালে প্রথম দিনের শুটিং থেকে শুরু করে একাধিক স্মরণীয় মুহূর্তের কথা টুডেস স্টোরি নিউজের সাংবাদিককে শেয়ার করলেন অভিনেত্রী সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
প্রশ্ন: প্রথমদিনের শুটিং কবে করেছিলেন? সেদিনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল আপনার?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: মহিষাসুরমর্দিনী’র প্রথম শুটিং হয় ১৯৯৪ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে, টালিগঞ্জের স্টুডিওতে। সেদিনের সিন ছিল- মহিষাসুর এবং দেবী দুর্গার কথোপকথন এবং বেশ কিছু যুদ্ধের অংশ। সত্যি বলতে, প্রথম শুটিং- এর অভিজ্ঞতা খুবই ভাল ছিল, কারণ সেই ভাবে আগে শুটিং করার অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই সেদিনের শুটিং এ, বহু জিনিস শেখা যা আজও আমার নৃত্য পরিচালনা থেকে শুরু করে নানান দিকে কাজে লাগাতে পারি।
প্রশ্ন: দুর্গার সাজে সেজে নিজেকে কেমন লাগছিল? মাটির দশটা হাত নিয়ে শুটিং করার অভিজ্ঞতা কেমন?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: একদশক ধরে টানা দুর্গার চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে প্রতিবারই চেষ্টা করেছি, আগের বারের অভিনয়ে কোথায় ভুল ছিল সেগুলিকে সংশোধন করার। এছাড়া, দর্শকের মনে দুর্গার যে প্রতিচ্ছবি রয়েছে এবং মণ্ডপ কিংবা বনেদি বাড়িতে দেবীর যে রূপ আমরা দেখতে পাই, তাকেই নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। সাজসজ্জা থেকে শুরু করে নৃত্য কিংবা যুদ্ধের সময় দশভুজার তেজ ইত্যাদি সবকিছুই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। তবে উল্লেখ্য যে, এই সাজসজ্জার সময় কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা শিল্পীরাও থাকতেন। তাঁরা মূলত সাজ শেষ হওয়ার পর কোন ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলে বলে দিতেন।
এছাড়া, দেবীর যে বর্ণনা পুরাণ ও মার্কেণ্ডেয় শ্রীশ্রীচণ্ডীতে পাই তার বিস্তৃতি বিবরণ পণ্ডিত অজয় ভট্টাচার্য আমাদের শুটিং এর আগেই বুঝিয়ে দিতেন। আর প্রথম দিকে মাটির আটটি হাতের কাঠামো বাধা হয়েছিল, আর অসম্ভব ভারি ছিল সেটি। আটটি মাটির হাত নিয়ে মুভমেন্ট করাও যথেষ্ট অসম্ভব ছিল। পরে প্রতিমা শিল্পীরা ফাইবারের আটটি হাত তৈরি করতে বলেন, সেই মতন আটটি হাত তৈরি হয়। তবে সেই হাতগুলি নিয়ে কোন সমস্যা ছিল না।
প্রশ্ন: দর্শকরা আজও টিভির পর্দায় আপনাকেই দুর্গারূপে দেখতে অভ্যস্ত, কি বলবেন এ বিষয়ে?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: দর্শকদের এই ভালোবাসা ও আশীর্বাদ, ভগবান প্রদত্ত বলেই মনে করি। আমি প্রত্যেকের কাছে নতমস্তকে প্রণাম জানাই যে, তাঁরা তিরিশ বছর ধরে আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আসছেন এবং তাঁদের অন্তরে কোথাও দুর্গা চরিত্রে আমাকেই খুঁজে পাচ্ছেন এটা সত্যি আমার কাছে এক চরম প্রাপ্তি, যা সারাজীবনের সম্পদ বলেই মনে করি।
প্রশ্ন: কখনও যদি আবারও দুর্গার চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান কি করবেন?
সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়: আমার মনে হয়, আমি এতবছর দুর্গা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। এখন নতুন প্রজন্মকে সেই সুযোগ দেওয়া উচিত। এ প্রজন্মের অভিনেত্রীরা এখন কাজ করুন, আরও নতুন ভাবনা চিন্তা করুন, সেটাই ভালো হবে। এছাড়া, মহালয়ার ভোরে মহিষাসুরমর্দিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের যে ভালোবাসা রয়েছে সেটিকে ধরে রাখাই সবচেয়ে বেশি দরকার। বলতে পারি এই মহিষাসুরমর্দিনী গীতি আলেখ্যের পথ প্রদর্শক অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং দূরদর্শন। তারা দীর্ঘ বছরের পর বছর ধরে যে কাজ দর্শকদের সামনে তুলে ধরেছেন এবং সেই থেকে বর্তমানে যে এই বিষয়টিকে নিয়ে এত কাজ হচ্ছে সেই ধারাবাহিকতাকেই বজায় রাখা দরকার বলে আমি মনে করি।