থিসিসের ‘দাম’ ১৫ লক্ষ? টাকা দিতে রাজি না হওয়ার খেসারত দিতে হল নির্যাতিতাকে? কী বলছে তদন্ত?

📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: ১৫ লক্ষ টাকা দিলেই নিজের গবেষণাপত্র জমা করতে পারার ‘অনুমতি’ পাওয়া যায়? না দিলে কী হয়?। ‘দেখে নেওয়া হবে’! আরজি করের নির্যাতিতাকেও কি সে কারণে ‘দেখে নেওয়া হয়েছিল’? ১৫ লক্ষ টাকা দিতে অস্বীকার করায় ধর্ষণ এবং খুন করা হয় আরজি করের নির্যাতিতা চিকিৎসককে?

তদন্তে সেরকমই তথ্যপ্রমাণ মিলেছে বলে দাবি সিবিআই সূত্রের। জানা গিয়েছে, নির্যাতিতা ওই টাকা দিতে রাজি হননি। অভিযোগ, গত এক বছর ধরেই তাঁকে হাসপাতালে ডিউটি চলাকালীন নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছিল। সে কারণেই নাকি কাছের মানুষদের নির্যাতিতা জানিয়েছিলেন, যে ডিউটি করতে তাঁর ভাল না লাগার কথা। ‘উপরমহলে’ লিখিত অভিযোগ জানানোর কথাও নাকি ভেবেছিলেন তিনি।

তদন্তে জানা গিয়েছে, বিষয়টি নাকি ‘সামলে নেওয়া’র নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল আরজি কর হাসপাতালেরই কয়েক জনকে। তাঁরা কারা? ‘উপরমহল’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে, সে সব প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। এই মুহূর্তে নাকি আদালতগ্রাহ্য প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। মৃতার এক সহপাঠীর ফোন থেকেই টাকা দাবি করার এই চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।

এর আগে মৃত চিকিৎসকের থিসিস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল তদন্তের সময়ে। জানা যায় দেড় বছর পর হঠাৎ থিসিসের বিষয় পাল্টাতে হয়েছিল তাঁকে কেন?

নির্যাতিতার পরিবারের তরফে জানানো হয়, মেয়ের গবেষণাপত্র জোর করে অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের মেয়ে বলেছিল, ওর লেখা থিসিস পেপার অন্য এক জনকে দিয়ে দেন ভিপি (ভিজ়িটিং প্রফেসর)।

নির্যাতিতা চিকিৎসকের দুই সহপাঠী এবং বিশেষ বন্ধুকে এই নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। স্নাতকোত্তর স্তরে তিন বছরের পড়াশোনার মধ্যেই তাঁদের একটি গবেষণাপত্র লেখা বাধ্যতামূলক, যেটা তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার আগে জমা দিতে হয়। কিন্তু কাজ শুরু করে দিতে হয় প্রথম বর্ষ থেকেই। দ্বিতীয় বর্ষের মাঝামাঝি সময় হয়ে গিয়েছে বলে নির্যাতিতা চিকিৎসকের গবেষণাপত্রের কাজ অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে ডেকে অন্য গবেষণাপত্র বানাতে বলা হয়, এবং তাঁর গবেষণাপত্রটি অন্য এক সহপাঠীকে দিয়ে দেওয়া হয়। এরকম ঘটনা বেনজির বলেই জানিয়েছেন নির্যাতিতার সহপাঠী। মৃতার বিশেষ বন্ধু জানিয়েছেন, প্রভাবশালী এক জনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক ছেলে নানা কলকাঠি নেড়েছে। প্রভাব খাটিয়ে চাপ তৈরির চেষ্টা করেছে। এর প্রতিবাদ করার খেসারত দিতে হল কি না, তদন্ত করে দেখা হোক।

ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের উপরে গবেষণা করবেন, ঠিক হওয়ার পর ‘এথিক্স কমিটি’তে পাশ করিয়ে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়েও অনুমতি চেয়ে পাঠিয়েছিলেন আরজি করের নির্যাতিতা চিকিৎসক। সেখান থেকেও ছাড়পত্রও চলে আসে। তারপর দ্বিতীয় বর্ষের মাঝামাঝি, অর্থাৎ কোর্স শুরুর দেড় বছর পর সেই গবেষণা চলে যায় অন্য সহপাঠীর কাছে। কেন? আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহত চিকিৎসক-পড়ুয়ার গবেষণার হাতবদলই এখন তদন্তের অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে। এই নিয়ে ঘনঘন জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

কার নির্দেশে, কেন এমন করা হয়েছিল? নির্যাতিতা পড়ুয়া চিকিৎসক তখন কোনও পদক্ষেপ করেছিলেন কিনা, তাঁর জেরেই এই পরিণতি কিনা, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।

error: Content is protected !!