📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: প্রতিবাদের সঙ্গে গানের সম্পর্ক কতটা ধারাল, তার সহজ উদাহরণ সত্যজিতের কালজয়ী ছবি ‘হীরক রাজার দেশে’। “দেখো ভালো মানুষ রইল অনাহারে/ মন্দ যে জন সিংহাসনে চড়ে”, এ গান শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন হীরক রাজা। এ তো গেলো সিনেমা। বাস্তবের মাটিতে সেই কবে বাঙালি হেঁটেছিল বঙ্গভঙ্গের বিরোধী আন্দোলনে। প্রতিবাদী গান বেঁধেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। স্বদেশিরা মন্ত্রের মতো করে মিছিলে মিছিলে গেয়ে উঠেছিল—“বিধির বাঁধন কাটবে তুমি এমন শক্তিমান!” ১৯০৫-এর মতোই ১২০ বছর পর ২০২৪-এ আর জি কাণ্ডের প্রতিবাদে বাঙালির কণ্ঠে ফিরল রবীন্দ্রসঙ্গীত। অবশ্য একা রবি ঠাকুর নন, মেয়েদের রাত দখল থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে, জুনিয়র চিকিৎসক-সহ সর্বস্তরের মানুষের মিটিং, মিছিলে ‘পুনর্জন্ম’ হয়েছে বিদ্রোহী কবি নজরুলেরও। এর পরেও চমক রয়েছে। কারণ আজকের প্রতিবাদী কণ্ঠে রবীন্দ্র-নজরুলকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন বাঙালির সঙ্গীত দুনিয়ার আরেক কিংবদন্তি সলিল চৌধুরী। একাধিক গানে গানে তিনি যেন ‘সন্ধ্যার ধ্রুবতারা’!
গত ৮ আগস্ট রাতে আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা ঘটে। জঘন্য অপরাধের বিচার চেয়ে শুরু হয় আন্দোলন। রাত দখলের ডাক দেন মেয়েরা। এর পরই প্রতিবাদের সুনামি আছড়ে পড়ে গোটা বাংলায়। যার কাণ্ডারি হন জুনিয়র চিকিৎসকরা। শুরু হয় মিছিল, মিটিং, ধরনা। চিকিৎসকদের পাশাপাশি অভিনেতা, সঙ্গীতশিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষাকর্মী, সাধারণ পড়ুয়া মায় সর্বস্তরের মানুষ পথে নামেন। সকলের দাবি এক— “উই ওয়ান্ট জাস্টিস”। বাঙালির এই প্রতিবাদের ভাষ্যে সমকালীন সঙ্গীত নয়, বরং বহু যুগের ওপাড় থেকে ফিরলেন আধুনিক বাঙালি সংস্কৃতির দুই হোতা রবীন্দ্র-নজরুল। ধর্মতলা থেকে ধুলাগড়, বরানগর থেকে বারাসত, যাদবপুরে থেকে কোচবিহার, সবখানে প্রতিবাদী মিছিলের আয়ুধ হয়ে উঠেছে “এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে/ জয় মা বলে ভাসা তরী” কিংবা “আগুন জ্বালো, আগুন জ্বালো/ ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে আগুন জ্বালো” এবং অবশ্যই “একলা চলো”। আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ‘রাজনৈতিক’ হোক বা ‘অরাজনৈতিক’, সমস্ত মিছিলে রবীন্দ্রনাথের একাধিক গান শোনা গেলেও নজরুলের ‘পুনর্জন্ম’ প্রধানত ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটিতেই। যদিও বিদ্রোহী কবির একাধিক আগুন জ্বালানো পংক্তি স্লোগান হচ্ছে মিছিলে মিছিলে। তবে কিনা সলিল চৌধুরী যে এভাবে উচ্চারিত হবেন, তা হয়তো ঘটনা ঘটার আগে অনেকেই ভাবতে পারেননি।