অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি গান শুনিয়েছিলেন শ্রীরামপুরের বুড়ি দুর্গাকে

📝শুভদীপ রায় চৌধুরী , Todays Story: শহর কলকাতার পাশাপাশি জেলাতেও বহু প্রাচীন দুর্গাপুজো আজও নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত হয়। কোনটির বয়স ৩০০ বছর, আবার কোনটি ৪০০ বছরেরও প্রাচীন। দূরদূরান্ত থেকে পুজোপ্রেমীরা ছুটে আসেন বাংলার প্রাচীন দুর্গাপুজোর স্বাদ নিতে। হুগলির শ্রীরামপুরের প্রাচীনতম দুর্গাপুজোর মধ্যে অন্যতম এই বুড়ি দুর্গা পুজো। চলতি বছর ৪২৯ বছরে পদার্পণ করল এই বাড়ির দুর্গা পুজো। দেবী পুরাণ মতে পুজো হয় এ বাড়িতে এবং মহালয়ার পরের দিন থেকেই পুজো শুরু হয়ে যায়। এখানে ঠাকুর হয় খোপ বাংলা চালায়। ঠাকুরের গায়ে থাকে প্রাচীন ডাকের সাজ। দুর্গা পুজোর প্রাচীন রীতিনীতি আজও মেনে আসছেন পরিবারের বর্তমান সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, শেওড়াফুলির রাজা মনোহর রায়ের দেওয়া জমিতে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন রামগোবিন্দ গোস্বামী। তবে মহারাজা জমিটি দান হিসেবে দিতে চাইলেও অব্রাহ্মদান হওয়ায় তা নিতে অস্বীকার করেন রামগোবিন্দ। অবশেষে একটি কড়ির বিনিময়ে গোস্বামীরা শ্রীরামপুরের বিস্তীর্ণ জমি কিনে নেন শেওড়াফুলির রাজার থেকে। উল্লেখ্য, সে বছরই গোস্বামীরা শ্রীরামপুরে একটি কুঠি বাড়ির পত্তন করেন। ১৫৯৫ সালে রামগোবিন্দ গোস্বামী শ্রীরামপুরের বসতবাড়িতে দুর্গা পুজোর সূচনা করেন। সম্ভবত ১৮০০ সালে বংশের সুসন্তান রাজীব গোস্বামীর হাত ধরেই তৈরি হয় এই বাড়ির বিশাল ঠাকুরদালান।
পরিবার সূত্রে খবর, দেবী পুরাণেই শারদীয়া পুজো হয়ে থাকে এ বাড়িতে। মহালয়ার পরের দিন, অর্থাৎ প্রতিপদ থেকেই গোস্বামীদের পুজো শুরু হয়ে যায়। বংশের প্রবীণ সদস্য সব্যসাচী গোস্বামী নিজে পুঁথি দেখে পুজো করেন এবং চণ্ডীপাঠ করেন। সপ্তমী থেকে মহানবমী অবধি পংক্তি ভোজনের আয়োজন করা হয় গোস্বামী বাড়িতে। বংশের সদস্য পিয়ালী পাঠক জানান, এ বংশের পূৰ্বপুরুষ শরৎচন্দ্র গোস্বামী পাটের ব্যবসা করে বিরাট সম্পত্তির মালিক হন। পুজোর দিনগুলো তিনি নিজে প্রতিবেশীদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতেন এবং কোনও বাড়িতে উনুন জ্বলতে দেখলে জল ঢেলে দিতেন। গোটা শ্রীরামপুরেই গোস্বামীদের পূর্বপুরুষদের এমন নানান ঘটনা ছড়িয়ে রয়েছে। এ বাড়ির সুসন্তান রঘুরাম গোস্বামী তখনকার দিনে ১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ড্যানিসদের কাছ থেকে শ্রীরামপুর কিনে নিতে চান , যা পরে ইংরেজরা কিনে নেন সাড়ে ১২ লক্ষ টাকায়।
বলাবাহুল্য, গোস্বামী বাড়ির দুর্গা পূজিত হন বাড়ির মেয়ে রুপে। পাশেই গঙ্গা থাকার পরেও নব পত্রিকা স্নান হয় বাড়ির ঠাকুরদালানেই। মহাষ্টমীর দিন সন্ধিপুজোর সময় গোটা ঠাকুরাদলান প্রদীপের আলোয় আলোকময় করে তোলা হয়। মহানবমীর দিন হয় কুমারী পুজো, সেই সঙ্গে ধুনা পড়ানো। ঠাকুরের ভোগেও রয়েছে বিশেষ বিশেষত্ব।
এ বাড়িতে সপ্তমীর দিন দেওয়া হয় সাত পদ, মহাষ্টমীর দিন আট পদ এবং মহানবমীর দিন নয় পদের ভোগ নিবেদন করা হয়। দশমীর দিন পান্তা ভাত, চালতা দিয়ে মোটর ডাল ও কচু শাক দিয়ে ভোগ নিবেদন করে উমাকে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।