📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: ধর্মতলায় একুশের মঞ্চের খুঁটি পুজো প্রতিবার নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করান তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। এবারও অন্যথা হয়নি। খাতাকলমে অবশ্য তৃণমূলের এই বার্ষিক কর্মসূচি কিন্তু দলের যুব সংগঠনেরই। কারণ ৯৩ সালের ২১ জুলাই যখন পুলিশের গুলিতে ১৩ জন কর্মীর মৃত্যু হয় সেই সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। অথচ বেনজির ভাবে এই প্রথম একুশের জুলাইয়ের মঞ্চে দলের যুব সভানেত্রী সায়নী ঘোষকে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগই দেওয়া হল না। বাগদা বিধানসভার উপ নির্বাচনে জিতে একুশের মঞ্চে বক্তৃতার সুযোগ পেলেন কনিষ্ঠতম বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুর। কিন্তু সায়নী সুযোগ পেলেন না। এখানেই শেষ নয়, সভার শেষে যুব সংগঠনের রদবদলের প্রশ্নে সায়নী ঘোষ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দ্য ওয়ালকে বলে গেলেন, “চেঞ্জ ইজ দ্য অনলি কনস্ট্যান্ট।” মানে পরিবর্তনই একমাত্র ধ্রুব। শনিবার একুশের মঞ্চের প্রস্তুতি দেখতে ধর্মতলায় গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের দাবি, সেই সময়ে সায়নী তাঁকে কিছু বলতে গেলে মমতা বলেন, তুমি নিজের কাজটা করো। আবার মমতা ধর্মতলার প্রস্তুতি দেখে চলে যাওয়ার পর রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গে সায়নী ঘোষের কিছুটা বাদানুবাদ হয় বলেও খবর।
জানা গিয়েছে, সায়নী সুব্রত বক্সীর কাছে জানতে চান, রবিবার শহিদ সমাবেশের মঞ্চ সঞ্চালনার দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হবে কিনা। কারণ, এই কর্মসূচি তো যুব সংগঠনের। জবাবে সুব্রত বক্সী বলেন, সেটা এত পরে কেন মনে পড়ল? একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে গত এক মাসে কতবার সায়নী তাঁর কাছে জানতে চেয়েছেন? তিনি তো রোজই পার্টি অফিসে থাকেন। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের পর দলের যুব সংগঠনের সভানেত্রী করা হয় সায়নী ঘোষকে। তার আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন যুব কংগ্রেসের সভাপতি। অভিষেকের আগে যুব সভাপতি ছিলেন সৌমিত্র খাঁ। তার আগে শুভেন্দু অধিকারী ছিলেন যুব সভাপতি। একুশের মঞ্চে এঁরা প্রত্যেকেই বক্তৃতা করেছেন। সেই ধারায় নজিরবিহীন ভাবে ছেদ পড়ল এবারই। এমনিতে যুব সংগঠনে রদবদলের ব্যাপারে সায়নীর থেকে ক’দিন আগে তালিকা চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা ও ব্লক স্তরে যুব সংগঠনে নতুন কাদের দায়িত্ব দেওয়া যায় তা জানতে চেয়েছেন তিনি। সেই তালিকা রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর কাছে জমা দিয়েছেন। ওই তালিকা থেকেই জেলা স্তরে যুব সংগঠনের নেতা বাছা হবে এমনটা চূড়ান্ত নয়। বরং এ ব্যাপারে আই প্যাক ও দলের সংগঠনের (মাদার) মতামত নেওয়া হবে। তার পর মমতা-অভিষেক তালিকা চূড়ান্ত করবেন।
কিন্তু যুব সংগঠনে যে ব্যাপক রদবদল হতে চলেছে তা এই ঘটনায় স্পষ্ট। অনেকের মতে, রবিবারের ঘটনায় এও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, যুব সংগঠনের সভানেত্রী পদে সায়নীর মেয়াদও এবার শেষ হয়ে আসছে। এবার লোকসভা ভোটে যাদবপুর আসনে প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন সায়নী। তৃণমূলের অনেক নেতার কথায়, ‘প্রাইজ সিট’ দেওয়া হয়েছে সায়নীকে। বড় কথা হল, একটা সময়ে আই-প্যাকের সমীক্ষায় দেখা গেছিল তৃণমূলের জন্য অন্যতম সেফ আসন হল যাদবপুর। সেই আসনে জেতার পর দলের মধ্যে সায়নীর গ্রাফ এতটা কেন পড়ে গেল, তা নিয়েই রবিবার দুপুর থেকে কৌতূহল শুরু হয়েছে। অনেকে মজা করে বলছেন, তৃণমূলে এই সাপ-মইয়ের খেলা চলতেই থাকে। তা ছাড়া এক পদে তিন বছরও তো হয়ে গেল। পরিবর্তনই একমাত্র ধ্রুব!