মমতাকে আরও শক্তিশালী করে দিল চার-শূন্য ফলাফল, রদবদল ও সংস্কার এখন সময়ের অপেক্ষা

📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: বাংলার রাজনীতি আর কলকাতার হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস এখন প্রায় একই রকম হয়ে গেছে। মাত্র তিন মাস আগের ঘটনা। রাজ্য রাজনীতিতে কেউ কেউ বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের পতন এবার অনিবার্য। লোকসভা ভোটে বাংলায় ২৫-২৬টি আসন জিতবে বিজেপি। তার পর আর দল ও সরকার ধরে রাখতে পারবেন না মমতা।

ফল হয়েছে পুরো উল্টো। সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলই বলছে, দিল্লি ও বাংলা দু’জায়গাতেই বিজেপির মাজা ভেঙে গেছে। এ রাজ্যে ১৮ থেকে কমে তারা এখন ১২-তে এসে ঠেকেছে। আর দিল্লিতেও মোদী সরকার আর নেই। ক্ষমতায় এখন জোট নির্ভর এনডিএ সরকার। শনিবার উপ নির্বাচনের ফলাফল বিজেপিকে আরও হতাশ করল বইকি। বাংলায় যে চারটি আসনে উপ নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে তিনটে ছিল বিজেপির দখলে। সবকটিই তাদের হাতছাড়া হল। ওদিকে সর্বভারতীয় স্তরে উপ নির্বাচনেও বারো আনা আসনে হেরে গেছে গেরুয়া দল। যা তাদের জনভিত্তিতে ধস নামারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

রাজনীতিতে এমন সুযোগ কেউ হাতছাড়া করেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও করেননি। লোকসভা ভোটের পর থেকে গত প্রায় এক মাস সময়ে দিদি যেভাবে নিজের দলকেই বকাঝকা শুরু করেছেন, পুলিশ, আমলা ও দলের একাংশকে লোভী বলছেন, তাতে একটা ব্যাপার পরিষ্কার—বাংলায় বিরোধী পরিসর যেটুকু দখল করে রয়েছে বিজেপি, তা আরও ছোট করে দিতে চান তিনি। অর্থাৎ তিনি শাসক। তিনিই বিরোধী। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যদি তৃণমূলের একাংশের সমালোচনা করেন, তাহলে শুভেন্দুদের হাতে পড়ে থাকল কী? উপ নির্বাচনের চার-শূন্য ফলাফল এহেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরও শক্তিশালী করে দিল। তার কারণ পরিষ্কার। একে তো বাংলায় আপাতত মজবুত বিরোধী বলে কিছু থাকল না। অন্তত আপাতত কিছুদিন তো নয়ই। দুই, ছাব্বিশ সালে বিধানসভা ভোটের আগে দল ও সরকার গুছিয়ে নিতে বড় সুযোগ পেয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এমন নয় যে সরকার ও দলে বদল তথা সংস্কারের আগ্রহ মমতার এর আগে ছিল না। কিন্তু ঘটনা হল, ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের পর থেকে ফায়ার ফাইটিং করতেই দিদির অনেকটা সময় লেগে গেছে। সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতরের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সি একদিকে লাগাতার তল্লাশি ও ধরপাকড় চালিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে জুড়েছিল বিচারব্যবস্থার কড়া পর্যবেক্ষণ। অন্যদিকে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত বুঝে দলের মধ্যেই কেউ কেউ ফায়দা তোলার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের বেয়াদপি হয় সহ্য করতে হয়েছে, অথবা সব জেনেও তোয়াজ করে চলতে হয়েছে। পাছে তাঁরা বিজেপিতে চলে যান বা অন্তর্ঘাত করেন—সেই আশঙ্কা সবসময়েই ছিল।

শাসক দলের অনেকের মতে, এহেন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন, কিছু আমলা ও পুলিশ কর্তারাও। তাঁরা তলে তলে যোগাযোগ রেখেছেন বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে। এমনকি কদিন আগে আমলাদের নিয়ে এক মিটিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী খোলাখুলিই বলেছেন, ভোটের সময় কোন কোন ডিএম-এসপি-কে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীরা ফোন করতেন, তাঁর কাছে সব খবর রয়েছে।

কিন্তু প্রথমে লোকসভা ভোট ও পরে এখন উপ নির্বাচনের ফলাফলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই সংকট এখন আর নেই। তৃণমূলের মধ্যে আর কেউ বিজেপির জুজু দেখিয়ে যেমন ফায়দা নিতে পারবেন না, তেমনই আমলা ও পুলিশ মহলও স্পষ্ট বার্তা পেয়ে গেছেন। যাঁরা যোগাযোগ রাখার জন্য ছাদে অ্যান্টেনা লাগিয়েছিলেন, তারাও সেসব গুটিয়ে নিয়েছেন। সুতরাং বহুদিন পর সরকার ও দলে বড় ধরনের ঝাঁকুনি এখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। তার প্রথম কিস্তির ঘোষণা হতে পারে ২১ জুলাইয়ের আগে। বাকিটা অগস্ট মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে অবশ্য অনেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতান্তর নিয়েও আলোকপাত করতে চাইছেন। কেউ বা মনে করছেন, সম্ভাব্য এই রদবদলে অভিষেকের মতামতের গুরুত্ব কমে যেতে পারে। কারণ, উপ নির্বাচনের সময়ে অভিষেক দেশে ছিলেন না। সাংগঠনিক কাজ থেকে সাময়িক বিরতি নিয়েছিলেন। সবটা দেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। তবে কালীঘাটের ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, এই ধারণা অসাড়। এ ধরনের ধারণা অতীতেও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এবারও তা হবে। সরকার ও দলে রদবদল অভিষেকের সঙ্গে আলোচনা করেই করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *