দেশভাগের প্রথম খসড়া, গান্ধী খুনের এফআইআর… কোটি কোটি অমূল্য নথি ডিজিটাইজ হচ্ছে দিল্লিতে

📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: এই মুহূর্তে এদেশে এমন এক কাজ চলছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রকল্প বলা যেতে পারে। সে কাজে ২৪ ঘণ্টা ধরে নিযুক্ত রয়েছেন একদল বিশেষজ্ঞ এবং সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ। মাস দুয়েকের মধ্যে আরও চারশো জন কর্মী এ কাজে যোগ দেবেন এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এই কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হবে।

এ প্রকল্প আর কিছুই নয়, গত প্রায় ১০০ বছরের ইতিহাসে যত নথি জমা রয়েছে সে সবের ডিজিটাইজেশন! দিল্লির সুবিশাল ন্যাশনাল আর্কাইভসের অন্দরে তাই উত্তেজনা তুঙ্গে। অফিসের দু’টি ফ্লোর জুড়ে চারশো তরুণ-তরুণী কোমর বেঁধে লেগে রয়েছেন, প্রাচীন থেকে প্রাচীনতর নথি ঘেঁটে বার করে সেসব ডিজিটাইজ করতে। সূত্রের খবর, মোট ৩৪ কোটিরও বেশি নথি রয়েছে সেখানে। এখন দৈনিক প্রায় চার লক্ষ করে পাতা ডিজিটাইজ করে ভরে ফেলা হচ্ছে কম্পিউটারের পেটে। লক্ষ্য, দৈনিক ৬ লক্ষে পৌঁছনো।

আর এই কাজ করতে গিয়েই হাতে পাওয়া যাচ্ছে, ঝাঁসির রানির চিঠি থেকে শুরু করে, লর্ড মাউন্টব্যাটেনের দেশভাগের পরিকল্পনার খসড়া, এমনকি মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করার পরে দায়ের হওয়া এফআইআর-এর আসল কপি! যা রীতিমতো শিহরন জাগানো বিষয় বলেই মনে করছেন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তরুণ-তরুণীরা।

প্রসঙ্গত, ভারতের আর্কাইভের অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। বছরের পর বছর ধরে সরকারি উদাসীনতার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে বহু অমূল্য ও জরুরি নথি। ন্যাশনাল আর্কাইভ অফ ইন্ডিয়া যে ডিজিটাইজেশনের কাজ শুরু করেছে, তা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তবু, ইংরেজি প্রবাদবাক্য ‘বেটার লেট দ্যান নেভার’ মেনে, কাজ শুরু করেছে সরকার।

এই কাজের জন্য মোট ৭৫টি স্ক্যানার ইনস্টল করা হয়েছে, যেগুলির প্রত্যেকটি প্রতি আট ঘণ্টার শিফ্টে চার-পাঁচ হাজার পৃষ্ঠা করে স্ক্যান করছে। ২০-৩০ বছর বয়সি কয়েকশো তরুণ-তরুণীকে সপ্তাহ দুয়েকের প্রশিক্ষণ দিয়ে মোতায়েন করা হয়েছে। সারা দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসে তাঁরা এ কাজে হাত লাগিয়েছেন, মাসিক ১৫-২০ হাজার টাকা বেতনের বিনিময়ে। দিনরাত এক করে তাঁরা কাগুজে নথি ডিজিটাইজ করে চলেছেন এবং সরকারি ওয়েব পোর্টালে আপলোড করে চলেছেন। জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি পৃষ্ঠা আপলোড করা হয়ে গেছে।

এই প্রকল্পের এখ তরুণ সদস্য অভিষেক কুমার বলছিলেন, এটিই তাঁর প্রথম কোনও কাজের সুযোগ। আর সেই কাজ যে এত রোমাঞ্চকর হবে, তা তিনি ভাবতেও পারেননি। কারণ অজস্র পুরনো নথি ঘাঁটতে ঘাঁটতে, আচমকাই তাঁর হাতে চলে আসে. ১৯৪৭ সালের ৩ জুনের কাগজটি। দেখে থমকে যান ২৬ বছরের অভিষেক। কারণ সেটি ছিল, লর্ড মাউন্টব্যাটেনের ভারত ভাগের প্রথম খসড়া! অভিষেকের কথায়, ‘আমি এক মুহূর্তে ইতিহাসের স্রোতে ভেসে গেছিলাম। ছোটবেলা থেকে বইয়ে পড়েছি এই ভারত ভাগের কথা, তাই নিয়ে কূটনৈতিক পরিকল্পনার কথা। কিন্তু সেই নথির আসল কপি এভাবে চোখের সামনে দেখতে পাব, তা কোনওদিন ভাবতে পারিনি!’ অভিষেক সেটির ছবিও তুলে রেখেছেন নিজের সংগ্রহে রাখবেন বলে, যদিও সংবেদনশীল নথি হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেননি।

কয়েক ডজন স্ক্যানার এবং একরাশ পুরনো নথির স্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে আর এক কর্মী শশীভূষণ বলছিলেন, ‘দেশের এত পুরনো সব রেকর্ড যখন আমাদের হাতে আসে, তখন দারুণ লাগে। কারণ এখন আমাদেরই দায়িত্ব সেগুলি ঠিক মতো পরিচালনা করে ডিজিটাইজ করার। আমার মনে হয় এটা একটা খুব বড় কাজ। কারণ এই এত বড় প্রক্রিয়া সারা বিশ্বে বিরল। আমি রোজ এমন ৫০-৬০টা করে নথি স্ক্যান করে ডিজিটাইজ করে আপলোড করি ওয়েবসাইটে।’

error: Content is protected !!