উত্তর থেকে দক্ষিণ, রথযাত্রা নিয়ে মহানগরের বাঙালির নস্টালজিয়া

📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: রথযাত্রা। এই যুগ্ম শব্দটির সঙ্গে বাঙালির ছেলেবেলার নস্টালজিয়া যেন ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। বৈশাখে রবীন্দ্র জয়ন্তী আর জ্যৈষ্ঠে নজরুল জয়ন্তী পেরিয়ে গেলে আষাঢ় মাসের রথযাত্রাই হয়ে ওঠে বাঙালির বড় পরব। কলকাতার রথযাত্রা মানে রাস্তার ধারে ধারে ছোটোদের ছোটো ছোটো রথ টেনে নিয়ে যাওয়া। সেই ছোটো রথের এক একটির এক এক বাহার। জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের দিনগুলি সকলেই দারুণ উপভোগ করেন।সঙ্গে পাঁপড় ভাজা, জিলিপি আর রথের মেলা তো উপরি পাওনা। অন্তত বছর পনেরো আগেও এটা ছিল কলকাতার চিরপরিচিত রথযাত্রার পরিবেশ। আধুনিক ডিজিটাল যুগে অবশ্য এই উৎসাহ অনেকটাই কমে এসেছে। যদিও অনেকেই আবার সেই নস্টালজিয়া বজায় রাখার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে রথযাত্রা আয়োজনকারী ধর্মীয় সংস্থাগুলি পুরোনো দিনের স্মৃতিকে আজও বাস্তব রূপ দেয়। আর সেই প্রচেষ্টা আজও আছে বলে রথের দিন পুরী যেতে না পাওয়ার গ্লানি বাঙালি অনায়াসে মুছে ফেলতে পারে।

বিভিন্ন ধর্মীয় রথযাত্রা তো আছেই, তবে কলকাতার সেরা রথযাত্রা বোধহয় কচিকাচাদের রথ নিয়ে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য। রথযাত্রা উপলক্ষে কয়েদিন আগে থেকেই কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় কাঠের তৈরি ছোটো ছোটো রথ এবং জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রার মাটির মূর্তি নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। তাঁদের লক্ষ্য মূলত কচিকাচা ক্রেতা। বাড়ির ছোটো সদস্যের যে রথটি পছন্দ হবে অভিভাবকেরা সেটাই কিনে দেন। রথের দিন সকাল থেকে চলে সেই ছোট্টো রথের সাজসজ্জা, ফল, মিষ্টি কেনার পালা। বিকেল হতেই রথ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে কচিকাচার দল। সেই সব রথের বাহার দেখতে বেশ মজা লাগে। অনেকেই নস্টালজিক হয়ে পড়েন। উত্তর কলকাতার সাবেকি পাড়া হোক কিংবা দক্ষিণ কলকাতার অত্যাধুনিক এলাকা দৃশ্যটা প্রায় সব জায়গাতে একই থাকে। রাজপথ যেমন দখল করে রাখে ইসকনের রথ তেমনই শহরের অলিগলিতে চলে ছোটোদের রথের দাপট।

রথের দিন পাঁপড় ভাজা খাওয়া বাঙালির যেন এক অলিখিত নিয়ম। বাড়িতে তো বটেই এই দিন রাস্তাতেও শুধু পাঁপড় ভাজা নিয়ে বসেন দোকানিরা। কলকাতার বিভিন্ন স্থানে রথ উপলক্ষে মেলা বসে। সেই মেলায় পাঁপড় বিক্রি যেমন হয় তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিক্রি হয় জিলিপি। জিলিপি পাঁপড় না খেলে অন্তত বাঙালির রথযাত্রা সম্পুর্ণ হয় না। তবে রথের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার বুঝি মেলে ইসকনের খাবারের স্টলে। ব্রিগেড ময়দানে আয়োজিত রথের মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য বিনামূল্যে খিচুড়ি, লাবড়া বিতরণ হয়। এছাড়াও মেলায় থাকে ইসকনের নিজস্ব ক্যাফে গোবিন্দাস্-এ মেলে নানা সুস্বাদু নিরামিশ খাবার। রথের দিন অনেক বাঙালি বাড়িতে খিচুড়ি, ভাজা, লাবড়া, পায়েস ইত্যাদি তৈরি করে ঐশ্বরকে ভোগ দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *