পুরীর মতোই সুদীর্ঘ ও রোমাঞ্চকর ইতিহাস রয়েছে বাংলার রথযাত্রার মানচিত্রে

📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়াতে শুরু হয় মহাপ্রভু জগন্নাথের রথযাত্রা। সঙ্গী থাকেন দাদা বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রা। এই বছর রথযাত্রার দিন ৭ জুলাই। রথযাত্রা বললে প্রথমেই মনে আসে পুরীর জগন্নাথ ধামের নাম। বিশ্ব প্রসিদ্ধ এই স্থানটি বুঝি বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় তীর্থস্থান। তবে পিছিয়ে নেই বাংলার রথযাত্রাও। বাংলার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক ঐতিহ্যশালী রথযাত্রা।

ছবি:- নদীয়া জেলার মায়াপুরের ইসকন মন্দিরের রথযাত্রা

নদীয়া জেলার মায়াপুরের ইসকন মন্দিরের রথযাত্রা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত রথ উৎসব। এখানে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা রথে চড়ে আসেন। প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, মায়াপুর ও তার পার্শ্ববর্তী একটি গ্রাম ছিল রাজাপুর। রাজাপুর গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী। প্রায় পাঁচশো বছর আগে এক পুরোহিত স্বপ্নে দেখেন যে, রাজাপুর থেকে মায়াপুরে প্রস্থান করবেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। তার পর সেখান থেকে রথে চড়ে ফিরে আসবেন তাঁরা। এই প্রথা মতোই প্রতিবছর মায়াপুর ও রাজাপুর গ্রামে রথ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এই রথযাত্রা উপলক্ষে মায়াপুরে নয় দিন ধরে চলে কীর্তন এবং বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠান।

ছবি:- হুগলীর মাহেশের রথযাত্রা

ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম এবং বাংলার প্রাচীনতম মাহেশের রথযাত্রা আয়োজিত হয় হুগলির শ্রীরামপুরে। ১৩৯৬ খ্রিস্টাব্দে এই যাত্রা শুরু হয়। রথযাত্রার সময় মাহেশে গ্রামের স্নানপিড়ি ময়দানে এক মাস ধরে মেলা চলে। শ্রীরামপুরের মাহেশ জগন্নাথ দেবের মূল মন্দির থেকে মাহেশ গুন্ডিচা মন্দির (মাসীরবাড়ি) অবধি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার ৫০ ফিট উচ্চতার রথটি টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।উল্টোরথের দিন আবার রথটিকে জগন্নাথ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়। কিংবদন্তি অনুসারে, চতুর্দশ শতকে মাহেশের রথযাত্রার সূচনা করে বাঙালি সন্ন্যাসী ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী। সন্ন্যাস গ্রহণের পর স্বয়ং শ্রীচৈতণ্য মাহেশের জগন্নাথ মন্দির দর্শন করেন। পরবর্তীকালে ১৭৫৫ সালে কলকাতার নয়নচাঁদ মল্লিক মাহেশে জগন্নাথ দেবের বর্তমান মন্দির তৈরি করেছিলেন। বর্তমান রথটি ১৩০ বছরেরও বেশি পুরোনো।। সন্ন্যাস গ্রহণের পর স্বয়ং শ্রীচৈতণ্য মাহেশের জগন্নাথ মন্দির দর্শন করেন। পরবর্তীকালে ১৭৫৫ সালে কলকাতার নয়নচাঁদ মল্লিক মাহেশে জগন্নাথ দেবের বর্তমান মন্দির তৈরি করেছিলেন। বর্তমান রথটি ১৩০ বছরেরও বেশি পুরোনো।

ছবি:- পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের রথযাত্রা

মাহেশের মতোই পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের রথযাত্রাও বিখ্যাত। এই রথযাত্রার ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। ১৭৭৬ সালে মহিষাদলের জমিদার আনন্দলালের স্ত্রী জানকী দেবী এখানে রথযাত্রার সূচনা করেন। রথটি যখন তৈরি হয় তখন সেটি ছিল ১৭টি চূড়া বিশিষ্ট, ৩৪টি লোহার চাকাযুক্ত একটি সুবিশাল চার তলা রথ। অন্য একটি সূত্র বলে রানি নন, এই রথযাত্রা উৎসবের সূচনা নাকি করেছিলেন মতিলাল পাঁড়ে। অপুত্র অবস্থায় রাজা আনন্দলাল এবং রানি জানকী দেবী মারা গেলে মতিলাল নিজেকে পোষ্যপুত্র হিসেবে দাবি করে সিংহাসন দখল করেন।

ছবি:- হুগলীর রাজবলহাটের রথযাত্রা

মাহেশ বা গুপ্তিপাড়া ছাড়াো হুগলির রাজবলহাটের রথযাত্রাও বেশ প্রসিদ্ধ। রাজবলহাটের রথে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার মূর্তি থাকে না। এখানে “রাধাকৃষ্ণ” রথের উপর সওয়ার হয়ে বার হন। দেখে আসতে পারেন বর্ধমানের মেমারির আমোদপুরের রথযাত্রাটিও। প্রতি বছর এখানে ধুমধাম করে রথ যাত্রার আয়োজন করে আমোদপুরের জমিদারবাড়ি। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত রথ উৎসবের মধ্যে রয়েছে বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির রথ, কালনা রাজবাড়ির রথ, বর্ধমান রাজবাড়ির রথ। এছাড়াও কলকাতার পার্কস্ট্রিটে ইসকনের রথযাত্রা তো রয়েইছে।১৭৪০ অথবা ১৭৪৫ সালে গুপ্তিপাড়ায় রথ উৎসবের সূচনা করেন মধুসূদানন্দ। এখানে রথযাত্রার দিন ৪০ কুইন্টাল খাবার বিতরণ করা হয়। এটি প্রাচীন প্রথা। আসলে ভগবানের উদ্দেশ্যে ‘লুট’ দেওয়া হয়। গুপ্তিপাড়ার এই রথের উচ্চতা ৩৬ ফিট। রথযাত্রা উপলক্ষে গুপ্তিপাড়ায় সুবিশাল একটি মেলা বসে। বহুদূর থেকেও মানুষ গুপ্তিপাড়ায় উপস্থিত হন রথের মেলা দেখবার জন্য। নয় দিন ধরে চলে এখানে উৎসব অনুষ্ঠান।

error: Content is protected !!