📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: দিন কয়েক আগের কথা। যাদবপুর বিদ্যাপীঠে ক্লাস এইটের দুই ছাত্রের মধ্যে তুমুল মারামারি লাগল। এক ছাত্র রক্তাক্তও হলো। তাকে হাসপাতালে পাঠাতে হয়। সে সুস্থ হওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে স্কুলে গিয়েছিল বাবার সঙ্গে। কথায় কথায় বাবা ওই ছাত্রকে বলেন, ‘তুইও মারলি না কেন? তুই তো ক্যারাটে শিখিস!’ ছাত্রটি বাবাকে উত্তর দেয়, ‘আমি মারলে ওর খুব লাগত। তাই মারিনি। মারতে পারতাম, তবু মারিনি।’ওই ছাত্রের এই কথাতেই আইডিয়াটা মাথায় আসে স্কুলের। পড়াশোনায় ভালো হলেই তো ভালো মানুষ হওয়া যায় না। ভালো মানুষ হতে গেলে আরও অনেক মানবিক গুণ থাকতে হয়। থাকতে হয় দায়িত্ববোধও। কিন্তু এ সবেরই যেন বড় অভাব আজ। এই পরিস্থিতিতে মানবিক গুণগুলিকে স্বীকৃতি দিতে এ বছর থেকে পড়ুয়াদের জন্য দু’টি নতুন অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করল যাদবপুর বিদ্যাপীঠ।
যার একটি ‘গুড হিউম্যান বিইং অ্যাওয়ার্ড’ অর্থাৎ ভালো মানুষ হওয়ার জন্য পুরস্কার, অন্যটি ‘গুড সামারিটান অ্যাওয়ার্ড’ অর্থাৎ যে ছাত্রছাত্রীরা সমাজসেবায় যুক্ত হবে, পুরস্কারের মাধ্যমে তাদের স্বীকৃতি জানানো। বিদ্যাপীঠের লাগোয়া যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বছর খানেক আগেই উত্তাল হয়েছিল র্যাগিংয়ের পর ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায়। হস্টেলের পড়ুয়াদের একাংশের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর র্যাগিং আর যৌনহেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। এখনও জেলবন্দি ওই ঘটনায় অভিযুক্ত বহু ছাত্র।আবার, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সম্প্রতি মধ্য কলকাতার ‘উদয়ন’ হস্টেলে এক ব্যক্তিকে স্রেফ চোর সন্দেহে মেরে ফেলা হয়েছে। এতেও জেলে গিয়েছেন একদল অভিযুক্ত ছাত্র। এমন হিংসার ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়ায় মানবিকতাই কাঠগড়ায়। সে জায়গায় এমন পুরস্কার ছাত্রছাত্রীদের ভালো মানুষ হয়ে ওঠার পথে কিছুটা এগিয়ে দেবে বলেই মনে করছে স্কুল।
প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য জানান, এই অ্যাওয়ার্ড পেতে গেলে কেবল পড়াশোনাতেই ভালো হলে হবে না। ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার, তারা কতটা মানবিক, কেউ বিপদে পড়লে এগিয়ে আসে কি না, পড়াশোনার বাইরে অন্য কোনও বিষয়ে আগ্রহ কেমন — এ সব দেখেই এক বা একাধিক পড়ুয়াকে অ্যাওয়ার্ডটি দেওয়া হবে। তাঁর কথায়, ‘এ বছর থেকেই হোলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড বানাতে বলেছে রাজ্য সরকার। অর্থাৎ, কেবল পরীক্ষার নম্বর নয়, পড়ুয়া কতটা ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারছে, সেটাও দেখতে চাওয়া হচ্ছে।’ তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই এই চেষ্টা।মিত্র ইনস্টিটিউশন ভবানীপুর শাখাতেও এ ধরনের অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজা দে-র বক্তব্য, ‘স্কুলে ছেলেমেয়েরা মানুষ হতেও আসে। সেটাও দেখতে হবে!’বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রাম বলেন, ‘হানাহানি, হিংসার এই সময়ে এই ভাবনা সত্যিই মানুষ গড়ে তোলার জন্য পড়ুয়াদের অনুপ্রাণিত করবে।’ যে সব স্কুলে এ ধরনের অ্যাওয়ার্ড নেই, সেখানেও তা চালু করা দরকার বলে মনে করেন জয়রঞ্জন।