📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: শুধুমাত্র ‘ধূমকেতু’ পত্রিকাই নয়, জ্বালাময়ী ‘প্রলয়শিখা’ কবিতা লেখার অপরাধেও রাজরোষে পড়তে হয়েছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। এ কারণে ১৯৩০ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ইংরেজ পুলিস। শুধু তাই নয়, যেখানে হাজার হাজার মামলা জমে থাকে আদালতে সেখানে সাম্যবাদী এই কবিকে জেলে পাঠানোর জন্য প্রথম থেকেই উদগ্রীব ছিল ব্রিটিশ সরকার। সে কারণে দেরি না করে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ষড়যন্ত্রের মামলা দ্রুত শেষ করে দোষী সাব্যস্ত করে ছ’মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল ব্যাঙ্কশাল কোর্ট। ৯৩ বছর আগের সেই ঐতিহাসিক মামলার নথির হদিশ মিলল শহরের এই ফৌজদারি আদালতের এক নির্জন কুঠুরিতে। ইতিহাস প্রসিদ্ধ ওই নথি সম্প্রতি মরচে পড়া লোহার আলমারিতে সাদা কাপড়ে মোড়া অবস্থায় পাওয়া যায়। যা নিয়ে প্রবল উৎসাহ তৈরি হয় আদালত কর্মীদের মধ্যে। এক আধিকারিকের কথায়, এই প্রাচীন নথির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। ফলে খুব সন্তর্পণে পাতা খুলতে হয়েছে যাতে কোনও অবস্থাতেই হলুদ হয়ে যাওয়া সমস্ত পাতা ছিঁড়ে না যায়। সংরক্ষণের জন্য যা যা করার দরকার, তা সবই করা হবে। এখন তালাবন্দি অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়েছে ওই মামলার কাগজপত্র।
মামলার নথি থেকে জানা গিয়েছে, নজরুলের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন সাত ব্যক্তি। অধিকাংশ সাক্ষী পুলিসের লোকজন। ব্রিটিশ পুলিসের অভিযোগ, সরকারকে সন্ত্রস্ত এবং লোক ক্ষেপানোর জন্য এই কবিতা লিখেছেন অভিযুক্ত। বিচার চলাকালীন বাজেয়াপ্ত কবিতার নথি ও অন্যান্য নথিপত্র ডকুমেন্ট হিসেবে পেশ করা হয়েছিল। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রিটিশ সরকার মনে করেছিল, এই লেখক অন্যান্য বন্দিদের ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে। তাই তাঁকে বিভিন্ন জেলে স্থানান্তরিত করা হয়ে ছিল। ‘প্রলয়শিখা’ কবিতায় কবি কি লিখেছেন? ‘বিশ্ব জুড়িয়া প্রলয়‑নাচন লেগেছে ওই/নাচে নটনাথ কাল‑ভৈরব তাথই থই।/সে নৃত্যবেগে ললাট‑অগ্নি প্রলয়‑শিখ/ ছড়ায়ে পড়িল হেরো রে আজিকে দিগ্বিদিক…।’ জানা গিয়েছে, কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে শোরগোল পড়ে যায়। বিষয়টি ব্রিটিশ পুলিসের কানে গিয়ে পৌঁছয়। দেরি না করে পুলিস কবিকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অভিযুক্ত করে পাকড়াও করে। দ্রুত মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়। তাঁর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার প্রক্রিয়াও শুরু হয়। সেই মামলায় কবি সাজাপ্রাপ্ত হন। এক অফিসারের কথায়, ‘শহরের এই আদালতে কত গুপ্তধন লুকিয়ে রয়েছে কে জানে?’ তবে প্রবীণ আইনজীবীদের একাংশের কথায়, ‘এই শহরের বুকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক বিপ্লবী ও জননেতা ধরা পড়েছেন। আগামী দিনে সেই নথি প্রকাশ্যে এলে সকলেই উপকৃত হবেন।’