সমুদ্রের নোনা জলে পড়লেই গলবে এই প্লাস্টিক! পরিবেশ দূষণ রোধে নতুন সাফল্য জাপানের গবেষণায়

📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: পরিবেশ নিয়ে চিন্তা, সঙ্কট যত বাড়ছে, নিত্যনতুন গবেষণা হচ্ছে কীভাবে এই নীল গ্রহকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেওয়া সম্ভব হয়। তার মধ্যে, প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে বহুবছর ধরেই সরব সারা বিশ্ব।  জাপানের বিজ্ঞানীরা এবার এমন এক নতুন ধরনের প্লাস্টিকের সন্ধান পেয়েছেন, যা সমুদ্রের নোনা জলে গিয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গেই গলে মিশে যাবে। শুধু তাই নয়, কোনও ক্ষতিকর অবশেষও থাকবে না। নতুন এই গবেষণা সমুদ্র দূষণের বিরুদ্ধে জারি থাকা লড়াইয়ে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

জাপানের RIKEN Center for Emergent Matter Science এবং টোকিও ইউনিভার্সিটির (University of Tokyo) এক যৌথ গবেষণা প্রকল্পে তৈরি হয়েছে এই প্লাস্টিক। সাধারণ পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি প্লাস্টিকের মতো দেখতে হলেও, সমুদ্রের জলে পড়লে নুনের সংস্পর্শে এটি ভেঙে তার মূল উপাদানে ফিরে আসে।

গবেষণা দলের প্রধান প্রফেসর তাকুজো আইডা বলেন, ‘তিন দশকের গবেষণার ফল এই নতুন প্লাস্টিক। আমরা এমন একটি সুপ্রামলিকিউলার পলিমার তৈরির চেষ্টা করেছি, যা টেকসই, আবার নির্দিষ্ট পরিবেশে দ্রুত ভেঙে গিয়ে সম্পূর্ণ নিরাপদ পরিবেশবান্ধব যৌগের রূপ নেয়।’

কী দিয়ে তৈরি হয়েছে এই প্লাস্টিক?

এই প্লাস্টিক তৈরি করতে বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন দু’টি উপাদান:

সোডিয়াম হেক্সামেটাফসফেট (একটি সাধারণ ফুড অ্যাডিটিভ)
গুয়ানিডিনিয়াম আয়ন-বেসড মনোমার (সারের উপাদান হিসেবে ও মাটির গুণাগুণ বজায় রাখতে ব্যবহার হয়)

এই যৌগ দু’টি একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয়েছে এমন একটি পলিমার, যা সমুদ্রে গিয়ে নাইট্রোজেন ও ফসফরাসে ভেঙে যায়। এই দুই উপাদানই পরিবেশবান্ধব ও উপকারী মাইক্রোবস এবং গাছের জন্য পুষ্টিকর।

প্রফেসর আইডা বলেন, ‘সঠিক রাসায়নিক সংমিশ্রণ খুঁজে পাওয়া যেন খড়ের গাদায় সুচ খোঁজা। কিন্তু আমরা আমাদের এই গবেষণার প্রায় শুরুর দিকেই এমন একটা সংমিশ্রণ পেয়েছি, সেটা নিয়েই তারপর আমাদের গবেষণা এই দিকে এগিয়েছে।’

এই প্লাস্টিকের বেশ কিছু পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। যেমন- এটি বিষাক্ত নয় (মানবদেহেও ক্ষতিকর নয়), আগুনে পোড়ে না- ফলে পরিবেশে কার্বন ডাই-অক্সাইড বাড়ায় না কোনওভাবেই। সবচেয়ে বড় কথা এটি সহজেই পচনশীল ও মাইক্রোব-ডাইজেস্টিবল।

তবে প্রফেসর আইডা সতর্ক করেছেন, এই প্লাস্টিকের ব্যবহারেও নিয়ন্ত্রণ দরকার। কারণ অতিরিক্ত নাইট্রোজেন-ফসফরাস উপকূলবর্তী এলাকায় এটি অ্যালগাল ব্লুম ঘটাতে পারে, যা সম্পূর্ণ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

এই গবেষণার পেছনে আরও একটি বড় কারণ মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ। পাঁচ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট প্লাস্টিক কণা এখন মেরিয়ানা ট্রেঞ্চ থেকে এভারেস্ট পর্যন্ত, এমনকী মানুষের মস্তিষ্ক, প্লাসেন্টা তো বটেই সমুদ্রের গভীরে থাকা মাছের শরীরেও এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা এই সমস্যা মোকাবেলায় গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণার ডাক দিয়েছেন, কারণ এই দূষণ পৃথিবীর সমস্ত প্রাণের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর বিপর্যয়।

error: Content is protected !!