📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: রাত পোহালেই তারাপীঠে শুরু হচ্ছে বছরের অন্যতম বৃহৎ উৎসব—কৌশিকী অমাবস্যা। এই বিশেষ তিথিকে কেন্দ্র করে আজ বৃহস্পতিবার থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে সাধু-সন্ন্যাসী ও ভক্তদের আগমন শুরু হয়েছে। ভক্ত সমাগমের ভিড়ে সুশৃঙ্খলভাবে দেবী দর্শন ও পূজা নিশ্চিত করতে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে গোটা মন্দির চত্বরে বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি মন্দির প্রাঙ্গণকে ফুল ও আলোকসজ্জায় সাজানো হচ্ছে।
কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে পুরাণ কাহিনী অনুযায়ী দেবী তারা মা কৌশিকী রূপে আবির্ভূত হয়ে মহিষাসুর, কুশুম্ভ ও নিশুম্ভ দানবকে বধ করেছিলেন। আবার এদিনই তারাপীঠ মহাশ্মশানে শিমুল গাছতলায় সাধক বামাক্ষ্যাপা সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। তাই এই তিথিতে পূণ্যলাভের আশায় প্রতিবছরই লক্ষ লক্ষ ভক্ত ভিড় জমায় তারাপীঠে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
এবারও পুণ্যার্থীর সমাগম প্রায় পাঁচ লক্ষেরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই মন্দির চত্বরে কড়া নিরাপত্তা জারি হয়েছে। সারা বছর যেখানে ১০০ জন নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন থাকেন, সেখানে এবার কৌশিকী অমাবস্যাকে ঘিরে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত ২০০ জন নিরাপত্তারক্ষী। পাশাপাশি মন্দির ও আশপাশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ মোড়, ভিআইপি রাস্তা ও পূর্বসাগর মোড় জুড়ে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
ভক্তদের ভিড় সামলাতে পুলিশ, মন্দির কমিটি ও প্রশাসন মিলিতভাবে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে বারবার মাইকিং করে ঘোষণা করা হচ্ছে যাতে ভক্তরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে আসলে বাচ্চাদের পকেটে নাম ও ঠিকানা লিখে রাখেন। যাতে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেলে দ্রুত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।
ভক্তদের সুবিধার জন্য বিশেষ উদ্যোগ
মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় জানান—
“ভক্তদের যাতে কোনো সমস্যায় না পড়তে হয়, সেজন্য বৃষ্টি হলেও লাইনে দাঁড়িয়ে পূজা দিতে পারেন—সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিরপল দিয়ে মাথার ওপর ছাউনি দেওয়া হচ্ছে।”
শুক্রবার ভোর চারটায় দেবীকে শান ও মঙ্গল আরতির পর গর্ভগৃহ খোলা হবে। এরপরই দেবী অঙ্গে কৌশিকী পূজা শুরু হবে। সন্ধ্যায় দেবীকে স্বর্ণালঙ্কারে রাজবেশে সাজানো হবে।
হোটেল ভাড়া নিয়েও সতর্কতা
তারাপীঠ হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সুনীল গিরি স্পষ্ট জানান—
“ভক্তরা একদিন বা তিনদিন যেভাবেই থাকুন না কেন, নিয়ম অনুযায়ী ও সামর্থ্য অনুযায়ী ভাড়া দিতে হবে। কেউ বেশি ভাড়া নিতে পারবেন না। যদি কোনো হোটেল অতিরিক্ত ভাড়া নেয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কৌশিকী অমাবস্যাকে কেন্দ্র করে প্রশাসন, মন্দির কমিটি, পুলিশ, মেডিকেল টিম—সবাই একযোগে কাজ করছে। তাই ভক্তরা যেন নির্বিঘ্নে দেবী দর্শন করতে পারেন, তার জন্য জোরদার প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।

