📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: ‘ডন কা ইন্তেজার তো গ্যায়ারা মুলক কি পুলিস কর রহি হ্যায়.. লেকিন ডন কো পকড়না মুশকিল হি নহি.. নামুমকিন হ্যায়!’
সিনেমার ডনের ক্ষেত্রে ১১। আর আজ যাঁর কথা লিখছি, তাঁর ক্ষেত্রে ১৩। একটা-দুটো নয়, দেশের তেরোটা রাজ্যে পাঁচ বছর ধরে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’-এর তালিকায় ছিলেন আদতে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা অজয় কে. ওরফে কুরাপতি অজয়। তর্কাতীতভাবে সাম্প্রতিক অতীতে দেশের সবচেয়ে ধুরন্ধর জালিয়াত। যাঁর নামে সারা দেশে রুজু হয় কম করেও ডজন দুয়েক এফআইআর। অবস্থা এমনই দাঁড়ায়, শুধু ‘অপারেশন অজয়’ সফল করতেই একটি আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি হয় বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের স্বার্থে।
কে এই অজয়? বছরের পর বছর ধরে কীভাবে চালাতেন একের পর এক জালিয়াতির মাখনমসৃণ অপারেশন? সহজ ‘মোডাস অপারেন্ডি’– দেশের নানা শহরে হোটেলে-গেস্টহাউসে অসংখ্য নিরীহ মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানো, জালিয়াতি করে তাঁদের মূল্যবান সম্পত্তি হাতিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া, এবং জাল নথিপত্রের সাহায্যে নানাবিধ ছদ্মবেশ ধরে গ্রেফতারি এড়ানো। ‘এথিকাল হ্যাকিং’-এ পারদর্শী অজয়ের পক্ষে নথিপত্র জাল করা ছিল হাস্যকর রকমের সহজ।
চুরি-জালিয়াতির কল্যাণে বহু বছর ধরে রমরমিয়ে চলছিল বিলাসবহুল জীবন, কিন্তু বাদ সাধল বিধাননগর পুলিশ। চলতি বছরের ২৯ জুলাই আমাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন বিনয় কুমার নামে এক ব্যক্তি, অজয়ের সঙ্গে একই গেস্টহাউজে থাকাকালীন যাঁর কাছ থেকে ফোন, ওয়ালেট, মায় একটি ল্যাপটপ পর্যন্ত চুরি করেন অজয়। এতেই শেষ নয়, চুরি করা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ৫ লক্ষ টাকার সোনা, এবং ডেবিট কার্ড দিয়ে ফোন কেনার টাকাও হাতিয়ে নেন বিনয়ের নতুন ‘বন্ধু’। শেষ পর্যন্ত জালিয়াতির অঙ্কটা গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকায়!
সেই যে তদন্ত শুরু হল, ‘অজয় অভিযান’ থামল গিয়ে এক্কেবারে কেরালায়, গত রবিবার। বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ টিমের হাতে অবশেষে ধরা পড়লেন কুরাপতি অজয়। ১৩ টি রাজ্যের পুলিশের ঘুম কেড়ে নেওয়া জালিয়াতের গ্রেফতারির নেপথ্যে থাকল কয়েক মাসের বিনিদ্র পরিশ্রম, নানা রাজ্যের সূত্রের সঙ্গে ক্রমাগত সমন্বয়, হাজার হাজার নথিপত্র ঘেঁটে প্রয়োজনীয় এক টুকরো তথ্য সংগ্রহ করার অসাধ্য সাধন। সঙ্গে যোগ করুন অজয়ের বহুবিধ ছদ্মনাম ও ছদ্মবেশের বর্মভেদ করার দুরূহ কাজটা।
ভেবে দেখুন, আমাদের টার্গেট ছিলেন এমন একজন ‘শিল্পী’, যিনি প্রতিটি অপরাধের পরে অবিলম্বে পালটে ফেলতেন সেই অপরাধে ব্যবহৃত সিম এবং আধার কার্ড। ব্যবহার করতেন একাধিক ফোন। একই ছদ্মনাম ব্যবহার করে জোগাড় করতেন একাধিক সিম। আবার, শুধুমাত্র ওটিপি পাওয়ার জন্য চুরি করতেন অন্যদের ফোন। হোটেল, ফ্লাইট ইত্যাদি অনলাইনে ‘বুক’ করতেন ছদ্মনামে, যার ফলে সরাসরি ‘ট্র্যাক’ করে ধরা ছিল একপ্রকার অসম্ভবই। প্রায় ‘নামুমকিন’।
নিজের পারদর্শিতায় ক্রমে এমনই আস্থা তৈরি হয় অজয়ের, এতটাই তুঙ্গে পৌঁছয় আত্মবিশ্বাস যে, ‘কাজ’ মিটে গেলে অনেক সময় চুরি করা মোবাইল, ল্যাপটপ ইত্যাদি কুরিয়ার করে সটান ফেরত পাঠিয়ে দিতেন সেগুলির মালিকদের কাছে!
কেরালায় আমাদের হাতে ধরা পড়ার পরেও তাঁর কাছে পাওয়া যায় অজস্র সিম এবং আধার কার্ড৷ সঙ্গে বেশ কিছু ডিজিটাল ডিভাইস। এখন পর্যন্ত যা জেনেছি আমরা, তাতে চুরির টাকায় গোটা ১৫ আইফোন কিনেছিলেন অজয়, বিভিন্ন নামে জোগাড় করেছিলেন প্রায় ৪০টি সিম কার্ড।
আর কী কী করেছিলেন, ক্রমশ প্রকাশ্য। আপাতত সারা দেশের পুলিশের মাথাব্যথার কারণ আমাদের জিম্মায়। এই দুর্দান্ত সাফল্যের জন্য Bidhannagar City Police- কে অকুণ্ঠ অভিনন্দন।

