বিকল্প মুখ নিয়ে সন্ধান তৃণমূলের

📝 নিজস্ব সংবাদদাতা, Todays Story: দিঘার কাছে রামনগর বিধানসভা আসন ধরে রাখতে কি এ বার বিকল্প মুখের কথা ভাবছে তৃণমূল? দলবিরোধী কাজের জন্য তাদের তিন কর্মীকে শো–কজ়ের পর থেকে এমন আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও বিষয়টি নিছক জল্পনা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা নেতৃত্ব।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, ২০২৬–এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে রামনগর থেকে সর্বজনগ্রাহ্য মুখের অভাব প্রকট হয়ে উঠছে শাসক–বিরোধী উভয় দলেই। তৃণমূল ও বিজেপি— দুই দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যেই নাকি সমন্বয়ের অভাব ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। একদিকে ভূমিপুত্র এবং অন্যদিকে বহিরাগত প্রার্থী— এই দাবিকে ঘিরে অস্বস্তি বাড়ছে শাসক শিবিরে। তৃণমূলেরই একাংশের দাবি অনুযায়ী, মূলত এই অস্বস্তি এড়াতেই দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে রামনগর এলাকায় শো–কজ় করা হয়েছে তিন তৃণমূল কর্মীকে। কিন্তু তারপরেও রামনগরের প্রার্থী নিয়ে বিতর্ক বন্ধ হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না তৃণমূলকর্মীরা।

রামনগরের চার বারের বিধায়ক অখিল গিরি। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলের সঙ্গে রয়েছেন। ২০০১–এ জেতেন তৃণমূলের টিকিটে। ২০০৬–এ হেরে যান। ২০১১–য় তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে পর পর তিনবার জিতেছেন তিনি। ভূমিপুত্র না হওয়া সত্ত্বেও রামনগর এলাকায় প্রভাব রয়েছে তাঁর। অভিযোগ উঠেছে, গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই পটাশপুরের তৃণমূল বিধায়ক উত্তম বারিক গোষ্ঠীর সঙ্গে অখিল গোষ্ঠীর বিভাজন ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠে। আর তখন থেকেই রামনগরের প্রার্থী বদলের দাবি উঠতে শুরু করে। তৃণমূল শিবিরের অনেকের ধারণা, এই দুই গোষ্ঠীর কাউকে প্রার্থী করলে আসন হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই আবহে উঠে এসেছে বিকল্প মুখের প্রসঙ্গ। রাজনৈতিক মহলের মতে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাব এড়াতে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কলকাতার এক প্রতিষ্ঠিত প্রকাশক এবং এক প্রাক্তন আমলার নামও ঘুরতে শুরু করেছে। যাঁদের মধ্যে এক জন আবার ভূমিপুত্রও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের ব্লক স্তরের এক নেতার কথায়, ‘অখিল গিরি যেমন কাঁথির বাসিন্দা হয়ে রামনগর থেকে জিতেছেন, তেমনই উত্তম বারিক কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের বাসিন্দা হয়ে পটাশপুর থেকে বিধায়ক হয়েছেন। দলই ঠিক করবে কে, কোথায় দাঁড়াবে। ভূমিপুত্র আর বহিরাগত তত্ত্ব বিরোধীদের তৈরি। বিরোধীরা ভুলে গিয়েছেন, তৃণমূলকে মানুষ ভোট দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে। অন্য কাউকে দেখে নয়।’ তৃণমূল জেলা পরিষদের এক সদস্যের দাবি, ‘বিতর্ক থাকলেও রামনগরে তৃণমূলই জিতবে। প্রার্থী নয়, দল আমাদের কাছে বড়। নতুন বা পুরোনো মুখ — দল যাঁকেই প্রার্থী করবে, তিনি জিতবেন।’

তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পীযূষ পন্ডার কথায়, ‘পঞ্চায়েত ভোটে কে প্রার্থী হবেন তা বলারই ক্ষমতা নেই আমার। বিধানসভার প্রার্থী তো অনেক দূরের বিষয়। রামনগরের প্রার্থী নিয়ে বিরোধীরা পরিকল্পিত ভাবে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এতে কোনও লাভ হবে না।’

অখিল গিরি নিজে বলছেন, ‘ওসব নিয়ে ভাবি না। প্রার্থী কে হবে তা দলের বিষয়। আমার ভাবনার বিষয় নয়। দল দায়িত্ব দিয়েছিল। দায়িত্ব পালন করেছি। দলের নির্দেশই আমার কাছে চুড়ান্ত।’ উত্তমের কথায়, ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে কিছু নেই। আমি এ সবের মধ্যে থাকিও না। কলকাতা থেকে ঠিক হবে কে প্রার্থী হবেন।’

তৃণমূলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের এই অভিযোগ তুলে ঘোলা জলে মাছ ধরার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি–র দিকে। তাদের কাঁথির সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সোমনাথ রায়ের দাবি, ‘এখানে ওদের দলের সবাই ল্যাম্পপোস্ট। ওদের হাতে কিছু নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *